নিম পাতার উপকারিতা অনেক। কারণ নিম একটি ঔষধি গাছ, যার ডাল-পাতা-রস সবই কাজে লাগে । এই নিমপাতা সাধারণত ভেষজ ঔষধ হিসেবে অধিক বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়াও ত্বকের যত্নে নিম পাতার জুড়ি মেলা ভার। আজ আমরা নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিষয় আলোচনা করব।
তো চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা ও কার্যকারিতা এবং ত্বকের যত্নে নিম পাতার উপকারিতা ও কার্যকারিতা সহ যাবতীয় আরও বেশকিছু কুয়েরি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেতে আজকের পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ে ফেলুন।
নিম পাতার ১০ টি উপকারিতা
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
নিম পাতার অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি শরীরকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
২. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
নিম পাতার অ্যান্টি-গ্লাইসেমিক গুণ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
৩. ত্বকের সমস্যা দূর করে
নিম পাতার অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া ব্রণ, ফুসকুড়ি, চুলকানি, অ্যালার্জি ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে কার্যকর।
৪. চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করে
নিম পাতার অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে। এটি খুশকি, চুল পড়া, চুলের গোড়া দুর্বল হওয়া ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে কার্যকর।
৫. কৃমি দূর করে
নিম পাতার অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক গুণ কৃমি দূর করতে সাহায্য করে। এটি অন্ত্রের কৃমি দূর করে এবং হজমশক্তি উন্নত করে।
৬. মাড়ির সমস্যা দূর করে
নিম পাতার অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ মাড়ির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এটি মাড়ির প্রদাহ, রক্তপাত, দাঁতের ক্ষয় ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে কার্যকর।
৭. রক্ত পরিশোধন করে
নিম পাতার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ রক্ত পরিশোধন করতে সাহায্য করে। এটি রক্তের দূষক পদার্থ দূর করে এবং রক্তের প্রবাহ উন্নত করে।
৮. ক্ষত নিরাময় করে
নিম পাতার অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ ক্ষত নিরাময় করতে সাহায্য করে। এটি ক্ষত থেকে রক্তপাত বন্ধ করে এবং ক্ষত দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে।
৯. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে
নিম পাতার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণ মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। এটি স্ট্রেস, উদ্বেগ, ডিপ্রেশন ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে কার্যকর।
১০. ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দূর করে
নিম পাতার অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দূর করতে সাহায্য করে। এটি মশা, পোকামাকড়, টিক ইত্যাদি দূর করতে কার্যকর।
চুলের জন্য নিম পাতার ৫ টি উপকারিতা
১. চুলের খুশকি দূর করে
চুলের খুশকি একটি সাধারণ সমস্যা যা অনেক লোককে ভোগায়। নিমের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যগুলো খুশকি সৃষ্টিকারী ছত্রাককে মেরে ফেলে। এর ফলে চুলের খুশকি দূর হয় এবং চুলের গোড়া পরিষ্কার থাকে।
২. চুলের গোড়া শক্ত করে
নিমের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-প্রদাহ জনক বৈশিষ্ট্যগুলো চুলের গোড়া শক্ত করে। এর ফলে চুল পড়া কমে যায়।
৩. চুলকে নরম এবং মসৃণ করে
নিমের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলি চুলের লোমকূপগুলোকে পরিষ্কার করে। এর ফলে চুল নরম এবং মসৃণ হয়।
৪. চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
নিমের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলো চুলের রঙের কোষগুলিকে রক্ষা করে। এর ফলে চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ে।
৫. চুলকে সুস্থ রাখে
নিমের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যগুলো চুলের বিভিন্ন সমস্যা যেমন: চুলকানি, ব্রণ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি দূর করে। এর ফলে চুল সুস্থ থাকে।
ত্বকের যত্নে নিম পাতার ৫ টি উপকারিতা
১. ব্রণ দূর করে
নিম পাতায় থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। এছাড়াও নিমের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ব্রণের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
২. দাগ-ছোপ দূর করে
নিম পাতায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও, নিমের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান দাগ-ছোপের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
৩. মেছতা দূর করে
নিম পাতায় থাকা অ্যান্টি-হাইপারপিগমেন্টেশন উপাদান ত্বকের মেলানিন উৎপাদন কমিয়ে মেছতা দূর করতে সাহায্য করে।
৪. ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে
নিম পাতায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও, নিমের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৫. ত্বকের বয়স ধরে রাখে
নিম পাতায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও, নিমের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ত্বকের বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করে।
নিম ফুলের ৫টি উপকারিতা
১. চর্মরোগের চিকিৎসায়
নিম ফুলের মধ্যে থাকা অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণাবলী বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগের চিকিৎসায় কার্যকর। নিম ফুলের রস ত্বকের ক্ষত, ব্রণ, ফুসকুড়ি, একজিমা, এবং সোরিয়াসিসের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
২. রক্ত পরিশুদ্ধকরণ
নিম ফুলের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণাবলী রক্ত পরিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে। নিম ফুলের রস রক্তের কোলেস্টেরল এবং শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
নিম ফুলের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ডায়াবেটিক গুণাবলী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। নিম ফুলের রস রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে
নিম ফুলের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণাবলী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। নিম ফুলের রস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৫. হজমশক্তি বৃদ্ধিতে
নিম ফুলের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণাবলী হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। নিম ফুলের রস পেটের ব্যথা, গ্যাস, এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
নিম পাতার ঔষধি গুনাগুন | নিম পাতার ব্যবহার
টক চুল এবং স্বাস্থ্য রক্ষার্থে নিম গাছের পাতা ডাল এবং ফুল আপনি কিভাবে ব্যবহার করবেন তা জানতে হলে নিচের অংশটুকু মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার:
নিম পাতার রস চুলের জন্য খুবই উপকারী। আমরা জানি যখন মাথার ত্বকে কোন সমস্যা দেখা দেয় অথবা অতিরিক্ত খুশকির আবির্ভাব ঘটে, তখন চুল ঝরে পড়ার প্রবণতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। আর খুশকি ভাব দূর করতে মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখতে নিমপাতা বাটা এবং নিম গাছের ছাল বাটা নিয়মিত ব্যবহার করলে সুফল পাওয়া যায়।
অতএব আপনি যদি চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার করতে চান সেক্ষেত্রে সপ্তাহে দুই দিন অথবা এর বেশি সময় মাথার ত্বকে নিম পাতার রস কিম্বা নিম পাতা বাটা লাগিয়ে রাখুন। চাইলে মেহেদী পাতার সাথে নিমপাতা মিক্সড করে ব্যবহার করতে পারেন। কেননা উভয় পাতায় চুলের গোড়া মজবুত রাখে, মাথার ত্বক পরিষ্কার করে এবং চুল ঝরে পড়ার অন্যান্য সমস্যা প্রতিরোধ করে।
ত্বকের যত্নে নিম পাতার ব্যাবহার:
ত্বকের যত্নে নিমপাতা অনেক বেশি ব্যবহৃত হয়। আর তাইতো লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবেন এ পর্যন্ত বিভিন্ন ফেসওয়াশ স্নো এবং সাবানে নিমের ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন ধরুন একটি জনপ্রিয় ফেসওয়াস হচ্ছে হিমালয়া নিম ফেসওয়াস। কেননা নিয়মিত নিমপাতা মুখে ব্যবহার করলে ত্বক অনেক বেশি উজ্জ্বল হয় এবং ব্রণের সমস্যা ঠিক হয়ে যায়।
তবে নিম পাতা বাটার সঙ্গে কাঁচা হলুদ বাটা মিক্সড করে ত্বকে লাগালে ত্বকে অনেক বেশি গ্লোভাব আসে এবং স্কিনটোন ঠিক হয়ে যায়। তাই যারা চুলের যত্নের পাশাপাশি ত্বকের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার করতে চান তারা এই প্রসেসে সপ্তাহে পাঁচ দিন অথবা ৩ একটি ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
স্বাস্থ্য যত্নে নিম পাতার ব্যবহার:
ইতিমধ্যে আমরা নিম পাতার উপকারিতা হিসেবে যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছি সেগুলো জানার পর নিশ্চয়ই নিমপাতা আমাদের জন্য কতটা প্রয়োজন সেটা বুঝতেই পারছেন। তাই আলোচনার এ পর্যায়ে স্বাস্থ্য যত্নে আপনি কিভাবে নিম পাতা ব্যবহার করবেন বা নিম পাতার ফুল ব্যবহার করবেন সেটাই জানাবো।
✓১. মাঝেমধ্যেই আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে অথবা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করার কারণে আমাদের শরীরে খোশ পাঁচড়ার মত সমস্যা দেখা দেয়। আবার দুর্ঘটনাবশত কখনো কখনো গভীর ক্ষতির সৃষ্টি হয়। মূলত এ ধরনের খোস পাচরা এবং পুরনো গভীর ক্ষত তে কোন ঘা দেখা দিলে নিমপাতা বাটার সঙ্গে সামান্য কাঁচা হলুদ মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে টানা ৭ থেকে ১০ দিন প্রলেপ আকারে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।
✓২. যাদের দাঁতের সমস্যা রয়েছে। যেমন ধরুন দাঁতের পচন, রক্তপাত মারি ব্যথা, দাঁত নড়বড়ে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। মূলত এই সকল সমস্যা দূর করতে নিন দারুণ ভূমিকা পালন করে। মূলত আপনি যদি দাঁতের সমস্যা প্রতিরোধের জন্য নিম পাতার সঠিক ব্যবহার করতে চান সেক্ষেত্রে পরিমাণ মতো নিমপাতা বেটে তার থেকে ৩০ ফোঁটা রস সংগ্রহ করে সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে তিন থেকে চারবার খেয়ে ফেলুন। কিছুদিনের মধ্যেই আপনি পার্থক্য উপলব্ধি করতে পারবেন।
✓৩. যারা শ্বাসকষ্টের রোগী বা অনেক বেশি দুর্বল শরীরের অধিকারী কিংবা বাতজ্বরের মতো সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য নিম পাতার রস এবং নিম ফুল অত্যন্ত উপকারী দুইটি খাদ্য পণ্য। আপনি মূলত নিম পাতার ফুল নিম পাতার রস শ্বাসকষ্টের সমস্যাটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত খেতে পারেন। আর হ্যাঁ নিম গাছের বীজও কিন্তু ঔষধি গুণসম্পন্ন। তাই মিমের বীজ গুড়া করে সেটা পানি অথবা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারবেন।
✓৪. মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতে নিম পাতার জুড়ি মেলা ভার। আপনি আপনার মুখে স্বাদ ফিরিয়ে আনার জন্য সুজির হালুয়ার সাথে অল্প পরিমাণ নিমের পাতাগুলো যুক্ত করুন এবং এভাবে কয়েকদিন যাবত খেতে থাকুন, দেখবেন ভিটামিন ঔষধের থেকেও অনেক বেশি কাজে এসেছে। এছাড়াও নিম পাতা ভাজা, নিমপাতা বরা খেতে পারেন। আবার নিম পাতার সর্বদো কিন্তু মুখের রুচি ফেরাতে কাজে দেয়।
তবে যারা তেতো খেতে একদমই পছন্দ করেন না বা খেতেই পারেন না তাদের জন্য অনেকটাই জুলুম হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু যেহেতু আপনি স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করছেন এবং কিছু সমস্যার সমাধানের জন্যই এটি খাচ্ছেন তাই অবশ্যই খারাপ লাগলেও খাওয়ার অভ্যাসটা করে তোলা জরুরী। কেননা এতে করে আপনার হাজারো উপকার হবে।
✓৫. বাচ্চাদের অসুখ নিয়ে আমরা সব সময় অনেক বেশিই চিন্তা করি। অনেকটা সতর্ক থাকা পরেও কখনো কখনো বাচ্চারা জন্ডিস রোগের আক্রান্ত হয়। যে কারণে কখনো কখনো নাজেহাল অবস্থা হয়ে যায় বাচ্চা এবং অভিভাবক উভয়েরই।
কিন্তু আপনি যদি বাচ্চাদের জন্য 5 থেকে 15 ফোটা নিমপাতার রস এবং সামান্য পরিমাণে মধু মিশিয়ে খালি পেটে খাওয়ান তাহলে দেখবেন জন্ডিস নিবেশ এর মধ্যেই উধাও হয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এই টোটকাটি খাওয়ানোর ফলে ইতিমধ্যে অনেক বাচ্চাদের জন্ডিস রোগ খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়েছে। তাই আপনি চাইলে নিম পাতার এই উপকারটাও গ্রহণ করতে পারেন।
নিম পাতার ৩ টি ফেসপ্যাক
নিম পাতার ফেসপ্যাক ব্যবহারে ত্বক ব্রণমুক্ত, উজ্জ্বল, মসৃণ এবং প্রাণবন্ত হয়। নিম পাতার ফেসপ্যাক তৈরি করাও খুব সহজ। আজ আমরা নিম পাতার তিনটি কার্যকর ফেসপ্যাকের রেসিপি নিয়ে আলোচনা করব।
১. নিম পাতা ও হলুদ ফেসপ্যাক
এই ফেসপ্যাকটি ব্রণ, দাগছোপ এবং ত্বকের অন্যান্য সমস্যা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর।
উপকরণ:
- ১০-১২টি নিম পাতা
- ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
- ১ চা চামচ মধু
প্রণালী:
- প্রথমে নিম পাতা ভালো করে ধুয়ে নিন।
- এরপর নিম পাতা বেটে নিন।
- এবার হলুদ গুঁড়ো এবং মধু নিম পাতা বাটার সাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- একটি মিশ্রণ তৈরি হবে।
- এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
২. নিম পাতা ও চন্দন গুঁড়ো ফেসপ্যাক
এই ফেসপ্যাকটি ত্বককে মসৃণ, উজ্জ্বল এবং দাগমুক্ত করতে সাহায্য করে।
উপকরণ:
- ১০-১২টি নিম পাতা
- ১ চা চামচ চন্দন গুঁড়ো
- ১ চা চামচ টক দই
প্রণালী:
- প্রথমে নিম পাতা ভালো করে ধুয়ে নিন।
- এরপর নিম পাতা বেটে নিন।
- এবার চন্দন গুঁড়ো এবং টক দই নিম পাতা বাটার সাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- একটি মিশ্রণ তৈরি হবে।
- এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৩. নিম পাতা ও অ্যালোভেরা জেল ফেসপ্যাক
এই ফেসপ্যাকটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
উপকরণ:
- ১০-১২টি নিম পাতা
- ১ চা চামচ অ্যালোভেরা জেল
- ১ চা চামচ মধু
প্রণালী:
প্রথমে নিম পাতা ভালো করে ধুয়ে নিন।
এরপর নিম পাতা বেটে নিন।
এবার অ্যালোভেরা জেল এবং মধু নিম পাতা বাটার সাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
একটি মিশ্রণ তৈরি হবে।
এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
নিম পাতা একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা অনেক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। তবে, নিম পাতার কিছু অপকারিতাও রয়েছে।
নিম পাতার অন্যান্য উপকারিতা ও ব্যাবহার| নিম পাতার জাদুকরী ক্যালমা
নিমপাতা রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে অথবা তাজা অবস্থায় উভয়ভাবেই চা তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। কেননা নিম পাতার চা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। তবে আপনি চাইলে নিম পাতার সাথে আরো অন্যান্য কিছু উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন। যেমন মধু।
আপনি যদি একদমই তেতো কম খান সেক্ষেত্রে নিম পাতার চা তৈরিতে ১ মিনিটের মত চায়ের পানি জাল দেবেন। অন্যদিকে যদি তেতো খাওয়ার অভ্যাস থেকে থাকে সেক্ষেত্রে দুই থেকে তিন মিনিট জাল দিয়ে তাদের সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে তৈরি করবেন নিম পাতার চা।
এছাড়াও নিমের পাতা বেটে সেগুলো বরি আকারে রোদে শুকিয়েও খাওয়া যায়। মূলত খালি পেটে একটি করে বরি পানি দিয়ে গেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়। বিশেষ করে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য দারুন কাজে আসে।
আবার নীমের বিচির তেল দাঁতের মাড়িতে লাগালে দাঁতের ঘা এবং অন্যান্য আরো যাবতীয় সমস্যাগুলো খুব দ্রুত ঠিক হয়ে যায়। সেই সাথে মিমের ফুল ভাজা খেলে রাতকানা রোগ সেরে ওঠে। শুধু কি তাই?? সেই সাথে যদি আপনি এক গ্রাম নিম গাছের ছাল, আধা গ্রাম হলুদ এবং আমলকির গুঁড়ো এক গ্রাম একসঙ্গে মিশিয়ে খালি পেটে প্রতিদিন সকালে খান তাহলে যকৃত ও লিভারের ব্যথারও উপশম ঘটবে এবং আপনি যদি নিয়মিত নিম পাতার চা খান তাহলে জন্ডিসের মত জটিল রোগেরও বিদায়ের সময় আসবে।
এক কথায় হাজারো উপকারিতা রয়েছে নিম পাতার। এখন জানার বিষয়, নিম পাতার ক্ষতিকর দিক অর্থাৎ নিম পাতার অপকারিতা।
নিম পাতার অপকারিতা | নিমের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
প্রত্যেকটি জিনিসের ভালো এবং মন্দ অর্থাৎ উপকারিতা ও অপকারিতা থেকে থাকে। তাই নিম পাতার এত এত উপকারিতার মধ্যেও নিশ্চয়ই কিছু অপকারিতা অবশ্যই থাকবে। এর জন্যই অনেকেই জানতে চান নিম পাতার ক্ষতিকর দিক গুলো কি কি।
নিম পাতার অনেক বেশি ক্ষতিকর দিক নেই। তবে যাদের কিডনি অথবা লিভারের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য নিম পাতার রস ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া না খাওয়াটাই সর্বোত্তম।
এছাড়াও নিম পাতার হাতে গোনা আরও কিছু ক্ষতিকর দিক অর্থাৎ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে
- গর্ভাবস্থায় জটিলতা সৃষ্টি করা
- অহেতুক ক্লান্তির কারণ
আর তাই অবশ্যই আপনার যদি কিডনি অথবা লিভারের সমস্যা থাকে তাহলে নিম পাতার রস, নিম গাছের ছাল, নিম গাছের ফুল বা বীজ যে কোন কিছু খাওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
নিম পাতার উপকারিতা সম্পর্কিত আনুষঙ্গিক প্রশ্ন ও উত্তর
ইতোমধ্যে আমরা নিম পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা সেইসাথে নিম পাতার ব্যবহারবিধির সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি। এখন আলোচনার শেষ মুহূর্তে নিমপাতা সম্পর্কিত বহুল জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্নের উত্তর তুলে ধরছি। এর বাইরে যদি কোন প্রশ্ন বা মন্তব্য আপনাদের কাছে থেকে থাকে তাহলে কমেন্ট সেকশনে জানিয়ে দিন। পাশাপাশি এই ধরনের আরও আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন।
FAQ:
১. নিম পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম কি?
✓ নিম পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম হচ্ছে- Azadirachta indica A.Juss.
২. নিম পাতার বৈশিষ্ট্য
✓ নিম পাতা প্রায় সকলেরই পরিচিত। তবে এর বৈশিষ্ট্য হিসেবে একটি বিষয় উল্লেখ করা যায় সেটা হচ্ছে নিম্নের পাতাগুলো আকারের ছোট আকৃতির হয় এবং প্রচন্ড তেতো হয়ে থাকে। আপনি যদি নিম পাতা চিনে না থাকেন তাহলে আমাদের সাজেস্ট কৃত নিচের ইমেজটি লক্ষ্য করুন।
৩. নিম পাতার উপকারিতা এলার্জি
✓ নিম পাতা এলার্জি সমস্যা দূর করে। মূলত এ কারণেই নিম পাতার উপকারিতা অ্যালার্জি এমন কুয়েরি লিখে সার্চ করেন অনেকেই। আমরা আমাদের আর্টিকেলে নিম পাতার ব্যবহারে এটা উল্লেখ করেছি যে কি কি ভাবে নিম পাতার উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে। তাই রিকোয়েস্ট করব আবারো আরজিকেলটি পড়ে আসুন।
৪. নিম পাতার উপকারিতা কি?
✓ নিম পাতার উপকারিতা অনেক। যেমন এটি আমাদের শরীরের চুল ও ত্বকের সে সাথে ছত্রাকনাশক ব্যাকটেরিয়া নাশক এবং কীটপতঙ্গ নাশক হিসেবে কাজ করে। মূলত এগুলোই হচ্ছে নিম পাতার উপকারিতা।
৫. চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার কিভাবে করব?
✓ নিমপাতা বাটা চুলকানির জনিত স্থানে লাগিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
৬. নিম পাতায় কোন কোন রাসায়নিক উপাদান বিদ্যমান রয়েছে?
✓ নিমপাতাতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। মূলত নিমের ছাল ফুল ফল এবং বীজে স্যাপোনিন, এলকালয়েড নিমবিডিন, নিম্বন, নিম্বিনিন, নিম্বডল, ট্রাইটারপেনয়েড, সালনিন, এজাডিরাকটিন, জৈব এসিড, মেলিয়ানোন, নিম্বোলাইড, কুয়ারসেটিন ও গ্লাইকোসাইড, ট্যানিন, মারগোসিন, এজমডারিন নামক তিক্ত উপাদান গুলো বিদ্যমান থাকে।
৭. নিমের গাছ কোন অঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়?
✓ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি নিমের গাছ পাওয়া যায়।
৮. নিম গাছ প্রাপ্তবয়স্ক হতে কতদিন সময় লাগে?
✓ নিমগাছ প্রাপ্তবয়স্ক হতে সাধারণত ১০ বছর সময় লাগে। তবে এটা সাধারণ নিম গাছের ক্ষেত্রে।
৯. নিম পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের কি কি ক্ষতি করে?
✓ নিম পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের হাজারো উপকার করে। তবে যাদের গর্ভে বাচ্চা রয়েছে এবং কিডনি ও লিভারের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য নিম পাতা ক্ষতিকর। তবে একদমই নিষিদ্ধ কিনা এটা সুনিশ্চিত হতে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করুন।
১০. নিম গাছের পাতা ফুল কিভাবে খাওয়া যায়?
✓ নিম গাছের পাতা এবং নিম গাছের ফুল ভাজি করে অথবা বড়া এবং চপ আকারে ভেজে খাওয়া যায়।