বাচ্চাদের ঘাড় শক্ত হয় কত মাসে, একজন শিশু জন্মের পর কোন মাসে কি করে, বাচ্চাদের স্বাভাবিক বিকাশ ঘটছে কিনা তা বোঝার উপায় কি, বাচ্চারা কত মাসে বসা শেখে এবং বাচ্চাদের ঘাড় এদিক ওদিক করা যায়, ঘাড় সোজা করার উপায় কি, এমন হাজারো প্রশ্ন ঘোরাফেরা করে সদ্যজাত জন্মদাত্রী মায়ের মাথায়।
মা-বাবা সর্বদা সন্তানদের প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে চিন্তিত থাকে। এমনকি বাচ্চাদের ঘাড় শক্ত হয় কত মাসে এটা জানতেও ব্যতিব্যস্ত থাকে অনেকেই। আজকের এই পোষ্টের সাহায্যে আমরা ঐ সকল বাবা-মায়ের চিন্তা দূর করার চেষ্টা করব এবং সুস্পষ্ট ধারণা দেবো যে, বাচ্চাদের ঘাড় শক্ত হয় কত মাসে! আসুন কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনা পর্ব শুরু করা যাক এবং জেনে নেওয়া যাক শিশুর ঘাড় কখন থেকে শক্ত হয় সে সম্পর্কে খুঁটিনাটি সঠিক তথ্য।
বাচ্চাদের ঘাড় শক্ত হয় কত মাসে
বাচ্চাদের ঘাড় সাধারণত ছয় মাসের কাছাকাছি সময়ে শক্ত হতে দেখা যায়। সোশ্যাল স্মাইল সাধারণত ছয় সপ্তাহের পরবর্তী সময়ে শুরু হয়। তবে শরীর বিশেষে শিশুদের শারীরিক বিকাশের ধরন বিভিন্ন হয়ে থাকে। এ কারণে অনেক বাচ্চার সময়ের আগেই ঘাড় মোটামুটি শক্ত হয়ে যায়, আবার এমন কিছু কিছু বাচ্চার ঘাড় শক্ত হতে আরও বেশ কিছুটা সময় লাগে।
তাছাড়াও এটা আমরা সবাই জানি যে– বাচ্চাদের হাত পা এবং শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভীষণ নরম থাকে। কিন্তু এক মাস দুই মাস পর বাচারা ঘাড় নড়ানোর চেষ্টা করে। অতঃপর বাচ্চার বয়স যখন ছয় মাসে পৌঁছায় তখন ওই বাচ্চাটি নিজেই নিজের মাথা ও ঘাড় সোজা রাখতে সক্ষম হয়।
তবে আপনি যদি নিচে উল্লেখিত অংশটুকু মনোযোগ সহকারে পড়েন, তাহলে একজন শিশু সাধারণত কত দিনে কত সপ্তাহে কি কি আচরণগুলো প্রকাশ করতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই মনোযোগ সহকারে পড়ুন আর্টিকেলের পরবর্তী অংশ। পাশাপাশি আপনি যদি এই ধরনের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত টিপস ও সহজ পরামর্শ পেতে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ুন।
বাচ্চাদের ঘাড় শক্ত হওয়ার সঠিক সময় | শিশু কোন মাসে কি করে?
বাচ্চাদের ঘাড় শক্ত হওয়ার সঠিক সময় হচ্ছে সর্বনিম্ন ৬ মাস বা তার বেশি। তবে একটা শিশু সাধারণত প্রথম ছয় সপ্তাহে–
- চোখে চোখে কথা বলে। মানে আই কন্টাক্ট করে থাকে।
- কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে নিজের ঘাড় ও মাথা
- সেই সাথে সোশ্যাল ইসমাইল শুরু হয় এবং ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পরবর্তীতে একটি শিশু ভাওয়েল উচ্চারণ করতে পারে। অতএব ও, আ, উম উচ্চারণ করতে সক্ষম হয়।
অন্যদিকে চার মাস অতিবাহিত হওয়ার পর ওই শিশু বাবলিং করতে শুরু করে। অতএব কনসোনেন্ট উচ্চারণ করার ক্ষমতা অর্জন করে। মানে কথায় কথায় বা, না এ ধরনের উচ্চারণ গুলো করে থাকে। এরপর যখন ছয় মাস অতিবাহিত হয় তখন ওই শিশুটি কিছুর সাপোর্ট নিয়ে বসতে পারে। যেমন ধরুন একটি আঙ্গুল ধরে থাকলেন অথবা পেছনে বালিশ কাথা দিয়ে সাপোর্ট দিয়ে রাখলেন ইত্যাদি। এমনকি ৬ থেকে ১০ মাসে ওই শিশুটি হামাগুড়িও দিতে শেখে।
অতঃপর যখন একটি শিশুর বারো মাস বয়স হয় তখন সে– অল্পস্বল্প দাঁড়াতে শেখে, হাততালি দিতে পারে এমনকি ছোট ছোট হাতে টাটা বাই বাই দেখাতে পারে। ছোট ছোট কিছু শব্দও উচ্চারণ করতে পারে এবং ওই বাচ্চা শিশুকে যদি আঙ্গুল দিয়ে কিছু দেখানো হয় তাহলে সে ওই জিনিসগুলো নোটিশ করতে সক্ষম হয়। অতএব বারো মাসে একটি শিশুর মস্তিষ্ক অনেকটাই বিকশিত হয় এবং কাজ করতে আরম্ভ করে।
আঠারো মাসে পৌঁছালে পুরোপুরি ভাবে হাটা শিখে যায় ওই শিশু। তবে মনে রাখবেন কিছু কিছু শিশুর ক্ষেত্রে এক থেকে দুই মাস বা তিন মাস আগা পেঁচা হতে পারে। অতঃপর চার বছর বয়সে খুব স্পষ্ট ভাবে কথা বলতে পারে এবং বাবা মা ভাই বোনের সাথে তাদের একটি সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়, যে সম্পর্কটা জন্ম থেকে থাকলেও ছিল না কোন কনভারসেশন সিস্টেম, সেটাই মূলত চালু হয় চার বছর বয়সে এসে।
ঠিক এভাবেই ধীরে ধীরে বাচ্চার স্বাভাবিক বিকাশ ঘটে। কিন্তু আমাদের উল্লেখিত এই সময়সীমার মধ্যে যদি এই পরিবর্তনগুলো না ঘটে তাহলে বুঝে নিতে পারেন আপনার শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ঘটছে না। এমনকি এক বছর বয়সে যদি কোন শিশু বাবলিং করতে না জানে তাহলে বুঝে নিবেন সেই শিশুটি অটিজমে আক্রান্ত।
এখন আসুন জেনে নেই– অটিজম শিশুর বৈশিষ্ট্য কি কি এবং অটিজম শিশুদের ঘাড় শক্ত হয় কত মাসে?
অটিজম শিশুর সাধারণ বৈশিষ্ট্য
অটিজম শিশুদেরকে মূলত অটিস্টিক শিশু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এই শিশুদের মাঝে সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণ প্রকাশ পায়। সেগুলো হলো–
- এই ধরনের শিশুরা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে না
- তারা সব সময় সামাজিক মেলামেশা থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে
- একটি স্বাভাবিক বাচ্চা শিশু কয়েক সপ্তাহে এবং মাসে অল্প-স্বল্প যে বিষয়গুলো আয়ত্ত করে অটিজম এ আক্রান্ত শিশুরা সেগুলোতে ব্যর্থ হয়
- তারা সবসময় নিজের মতো করে চলতে পছন্দ করে
- এ ধরনের শিশুরা কারো সঙ্গে কথা বলে না এমনকি 18 মাস বয়সের পর কথা না বলার প্রবণতা ধীরে ধীরে আরো বেড়ে যায়।
এদের মধ্যে আচরণে কিছু পরিবর্তন খুব স্পষ্ট ভাবে দেখা দেয়। যেমন ধরুন–
- ঘুরেফিরে একই কাজ বারবার করতে থাকে
- একই রকম ভাবে সব সময় কিছু অঙ্গভঙ্গি করে দেখায়
- একটা খেলা বারবার খেলে
- একটাই জামা কাপড় পড়তে পছন্দ করে
- নির্দিষ্ট কিছু জিনিসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পছন্দ করে
- নির্দিষ্ট পছন্দের বাইরে খাবার খায় না
এক কথায়, এই সকল শিশুরা কিছুটা স্পেশাল হয় এবং তারা সমাজ পরিবারের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে মিশতে পারে না বরং নিজেদের ছোট্ট ছোট্ট কিছু ভালোলাগা ও আকর্ষণীয় বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে নিজেদের জীবন প্রক্রিয়াকে।
আর এই ধরনের শিশুদের ঘাড় শক্ত হয় কত মাসে এটা সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে খুব সম্ভবত ছয় মাসের বেশি সময় প্রয়োজন পড়ে অটিজম রোগে আক্রান্ত শিশুদের ঘাড় শক্ত হতে।
বাচ্চাদের ঘাড় শক্ত করার উপায় | ঘাড় সোজা করার উপায়
বাচ্চাদের ঘাড় শক্ত করার অন্যতম উপায় হচ্ছে এক্সারসাইজ করানো। অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন ছোট্ট একটা শিশুর আবার এক্সারসাইজ! এটার মূলত কিছু টেকনিক রয়েছে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি শিশুর ধারে প্রতিদিন মালিশ করতে থাকেন।
এর জন্য মাটিতে শিশুকে উপর করে শুইয়ে দিতে হবে। অতঃপর হালকাভাবে ঘাড়ের সাইট দিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় যদি আপনি ঘাড় মালিশ করে দেন তাহলে ধীরে ধীরে বাচ্চাদের ঘাড় শক্ত হবে।
অথবা বাচ্চাদেরকে ছোট ছোট রঙিন খেলনা কিনে দিয়ে তাদেরকে খেলার প্রতি আকৃষ্ট করে ঘাড়ে এদিক ওদিক করানোর মাধ্যমেও কিছুটা শক্ত করা সম্ভব হয়। এক কথায় বাচ্চাদেরকে জোরজবরদস্তি না করে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠানোর চেষ্টা করা দরকার। এতে করে সুনির্দিষ্ট সময়ের পর অটোমেটিক বাচ্চাদের ঘাড় শক্ত হবে অর্থাৎ সোজা হবে।
বাচ্চাদের ঘাড় শক্ত করার বিষয়ে সতর্কতা
অনেকেই রয়েছেন যারা বাচ্চাদের ঘাড় শক্ত করার বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তা করেন এবং জোর জবরদস্তি করে ফেলেন। ভুলেও আঘাত লাগতে পারে এমন কোন কাজ করবেন না। এতে করে আপনার বাচ্চার উপকারের থেকে ক্ষতিটাই বেশি হবে।
মনে রাখবেন বাচ্চার ঘাড় সোজা হওয়ার সময় আপনা আপনি সোজা হয়ে যাবে। এতে শুধুমাত্র আপনি অল্প সল্প সাহায্য সহযোগিতা করতে পারেন কিন্তু জোরজবরদস্তি নয়।
আশা করা যায় আপনার শিশুর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠবে এবং ছয় মাসের মধ্যে ঘাড় সঠিক মাত্রায় শক্ত হবে।
এখন আসুন জেনে নেই– বাচ্চাদের ঘাড় শক্ত হয় কত মাসে এই সম্পর্কিত অন্যান্য আরো কিছু কুয়েরির উত্তর সমূহ। যেগুলো প্রায়ই অডিয়েন্স বন্ধুরা জানার জন্য গুগল ক্রোম ব্রাউজারে সার্চ করে থাকেন।
বাচ্চাদের ঘাড় শক্ত করার বিষয় সম্পর্কিত প্রশ্ন ও তার উত্তর
১. শিশুর ঘাড় শক্ত হয় কখন?
✓ মোটামুটি ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ার পর একটি শিশুর ঘর শক্ত হয়।
২. কত বছর বয়সে শিশুর ঘাট নিয়ন্ত্রণ করা উচিত?
✓ মোটামুটি চার মাস বয়সে শিশুর ঘাড় নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
৩. নবজাতক কত মাসে ঘাড় সোজা করতে পারে?
✓ ৫ থেকে ৬ মাসে নবজাতক ঘাড় সোজা করতে পারে। কিছু কিছু শিশুদের ক্ষেত্রে পাঁচ মাস সময় লাগে এবং কিছু কিছু শিশুদের ক্ষেত্রে ৬ মাস সময় লাগে।
৪. চার বছরের বাচ্চার কি ঘাড় শক্ত হতে পারে?
✓ একটি শিশুর ঘাড় সাধারণত ৫ থেকে ৬ মাসের মধ্যে শক্ত ও সোজা হয়। তবে চার বছরের বাঁচারও ঘাড় শক্ত হতে পারে যদি সেটা কোন সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। কেননা সর্দি অথবা গলার সংক্রমনের কারণে কখনো কখনো ঘাড় শক্ত হয়, যেটা স্বাভাবিক নয় একটি সমস্যা।
৫. মাথা একদিকে কাত হয় কেন?
✓ মাথা একদিকে কাত হয়ে যাওয়ার কারণ ঘাড়ের একপাশে শক্ত পেশে থাকা।
৬. বাচ্চাদের ঘাড় শক্ত করার জন্য করনীয় কাজ কি?
✓ বাচ্চাদের ঘাড় সাধারণত সঠিক সময় আসলে আপনা আপনি শক্ত এবং সোজা হয়ে ওঠে। তবে যদি আপনি সহযোগিতা করতে চান তাহলে আর্টিকেলের উল্লেখিত কাজগুলো করতে পারেন।
তো পাঠক বন্ধুরা এই ছিল বাচ্চাদের ঘাড় শক্ত হওয়ার বিষয় সম্পর্কিত আজকের আলোচনা পর্ব। আশা করছি বুঝতে পারছেন বাচ্চাদের ঘাড় শক্ত হয় কত মাসে। তো সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। সবাইকে আল্লাহ হাফেজ।