ব্রণ ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা। তবে অনেক ক্ষেত্রে ব্রণ থেকে দাগ থেকে যায়। এই দাগ ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট করে। ব্রণের দাগ দূর করা বেশ কঠিন। তবে কিছু ঘরোয়া উপায়ে এবং ত্বকের যত্নের মাধ্যমে এই দাগ দূর করা সম্ভব। আজকের পোস্টে আমরা ব্রণ দূর করার সকল প্রকার উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।
ব্রণ কেন হয়?
ব্রণ ত্বকের তৈলাক্ত গ্রন্থিগুলির প্রদাহের কারণে হয়ে থাকে। ত্বকের তৈলাক্ত গ্রন্থিগুলো সেবাম নামে এক ধরনের তৈলাক্ত পদার্থ নিঃসরণ করে। সেবাম ত্বককে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বকের বাইরের স্তরকে সুরক্ষা দেয়। তবে অতিরিক্ত সেবাম উৎপাদনের ফলে ত্বকের লোমকূপগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে লোমকূপের ভেতরে মৃত কোষ, জীবাণু এবং তেল জমে পুঁজ তৈরি হয়। পুঁজ জমে ব্রণের সৃষ্টি হয়। ব্রণ সাধারণত মুখ, পিঠ, বুক এবং কাঁধে দেখা দেয়। তবে এটি শরীরের যেকোনো অংশেই হতে পারে। ব্রণ কেবলমাত্র কৈশোরকালে দেখা যায় না বয়স্কদেরও ব্রণ হতে পারে।
ব্রণ হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলি হলো:
- হরমোন পরিবর্তন: কৈশোরকালে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ব্রণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এছাড়া গর্ভবতী মহিলাদেরও হরমোন পরিবর্তনের ফলে ব্রণ হতে পারে ব্রণ হতে পারে।
- ত্বকের তৈলাক্ততা: তৈলাক্ত ত্বক ব্রণ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
- জীবাণু: ত্বকের ভেতরে থাকা জীবাণুগুলোও ব্রণ হওয়ার কারণ হতে পারে।
- অতিরিক্ত ওজন: অতিরিক্ত ওজনের কারণেও ব্রণ হতে পারে।
- কিছু ওষুধ: কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ব্রণ হতে পারে।
- কিছু রোগ: কিছু রোগের কারণে ব্রণ হয়। যেমন থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওএস) ইত্যাদি।
ব্রণ কত প্রকার?
ব্রণ প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে:
- কমেডোনাল অ্যাকনে (Comedonal acne): এ ধরনের ব্রণ ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে গেলে হয়। এতে ত্বকের ছিদ্রে তৈলাক্ত পদার্থ ও মৃত কোষ জমে একটি কালো বা সাদা দানা তৈরি হয়।
- ইনফ্লামেটরি অ্যাকনে (Inflammatory acne): এ ধরনের ব্রণে ত্বকের ছিদ্রে প্রদাহ হয়। এতে ব্রণ লাল হয়ে যায় এবং পুঁজ হয়।
কমেডোনাল অ্যাকনে আরও দুই ধরনের হয়ে থাকে:
- ব্ল্যাকহেড (Open comedone): এ ধরনের ব্রণের ক্ষেত্রে ত্বকের ছিদ্রের মুখ খোলা থাকে। তাই একে কালো দানার মতো দেখায়।
- হোয়াইটহেড (Closed comedone): এ ধরনের ব্রণের ক্ষেত্রে ত্বকের ছিদ্রের মুখ বন্ধ থাকে। তাই একে সাদা দানার মতো দেখায়।
ইনফ্লামেটরি অ্যাকনে আরও চার ধরনের হয়ে থাকে:
- পাপিউল (Papule): এ ধরনের ব্রণের প্রভাবে ত্বকের ছিদ্রের মুখ লাল হয়ে ওঠে এবং হালকা ফুলে ওঠে।
- পাস্টিউল (Pustule): এ ধরনের ব্রণ পাপিউল এর মতোই লাল হয়ে ওঠে কিন্তু এর মধ্যে পুঁজ থাকে।
- নডিউল (Nodule): এ ধরনের ব্রণ পাস্টিউল এর চেয়ে বড় হয় এবং ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে।
- সিস্ট (Cyst): এ ধরনের ব্রণ নডিউলের চেয়েও বড় হয় এবং ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে।
ব্রণের দাগ দূর করার ১৫টি উপায়
১. ত্বকের যত্ন করুন
ব্রণের দাগ দূর করার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন ত্বকের যত্ন নেওয়া। ত্বক পরিষ্কার রাখুন এবং নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। ত্বক পরিষ্কার করার জন্য স্যালিসিলিক অ্যাসিড বা গ্লাইকোলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ ফেসওয়াস ব্যবহার করতে পারেন। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বক হাইড্রেটেড থাকবে এবং ব্রণের দাগ হালকা হয়ে যাবে।
২. ব্রণের চিকিৎসা করুন
ব্রণ থাকলে প্রথমেই ব্রণের চিকিৎসা করুন। ব্রণ চিকিৎসা করলে ব্রণ কমে যাবে এবং নতুন ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা কমবে। ব্রণ চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
৩. ডার্ক স্পট টোনার ব্যবহার করুন
ডার্ক স্পট টোনার ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। ডার্ক স্পট টোনার ব্যবহার করলে ত্বকের মৃত কোষ দূর হবে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
৪. ভিটামিন সি ব্যবহার করুন
ভিটামিন সি ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ক্রিম, টোনার বা সেরাম ব্যবহার করতে পারেন।
৫. রেটিনল ব্যবহার করুন
রেটিনল ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এক্ষেত্রে রেটিনল সমৃদ্ধ ক্রিম বা টোনার ব্যবহার করতে পারেন।
৬. হাইড্রোকুইনোন ব্যবহার করুন
হাইড্রোকুইনোন ত্বকের মেলানিন উৎপাদন কমাতে সাহায্য করে। হাইড্রোকুইনোন সমৃদ্ধ ক্রিম বা টোনার ব্যবহার করতে পারেন। তবে হাইড্রোকুইনোন ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৭. ট্রেটিনোইন ব্যবহার করুন
ট্রেটিনোইন ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। ট্রেটিনোইন সমৃদ্ধ ক্রিম বা টোনার ব্যবহার করতে পারেন। তবে ট্রেটিনোইন ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৮. পিকো লেজার থেরাপি
পিকো লেজার থেরাপি ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। পিকো লেজার থেরাপির মাধ্যমে ত্বকের মৃত কোষ দূর হয় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে।
৯. ফটোথেরাপি
ফটোথেরাপি ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। ফটোথেরাপির মাধ্যমে ত্বকের মৃত কোষ দূর হয় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে।
১০. ডার্মাল স্ক্রাব
ডার্মাল স্ক্রাব ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে। ডার্মাল স্ক্রাব ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে এবং ব্রণের দাগ হালকা হয়ে যাবে।
১১. ম্যাসাজ
মাসাজ ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। ত্বক ম্যাসাজ করলে ব্রণের দাগ হালকা হয়ে যাবে।
১২. স্বাস্থ্যকর খাবার খান
স্বাস্থ্যকর খাবার ত্বকের জন্য ভালো। স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে ত্বক সুস্থ থাকবে এবং ব্রণের দাগ কম হবে।
১৩. পর্যাপ্ত ঘুমান
পর্যাপ্ত ঘুম ত্বকের জন্য ভালো। পর্যাপ্ত ঘুমালে ত্বকের কোষগুলি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে এবং ব্রণের দাগ কমে যায়।
১৪. ধুমপান বন্ধ করুন
ধুমপান ত্বকে মেলানিন উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া ধুমপানের ফলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই ধুমপান এড়িয়ে চলুন।
১৫. সূর্যালোক থেকে দূরে থাকুন
বেশি সময় সূর্যের আলোর সংস্পর্শে থাকলে ব্রণের দাগ বৃদ্ধি পাওয়ার এবং দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সুযোগ থাকে। তাই সান স্ক্রিন ব্যবহার করুন এবং সূর্যালোক থেকে যত সম্ভব দূরে থাকুন।
ব্রণের দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়
ব্রণ একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি ত্বকে দাগ রেখে যেতে পারে। এই দাগ দূর করতে অনেকেই বাজারের প্রসাধনী ব্যবহার করেন। তবে ঘরোয়া উপায়েও ব্রণের দাগ দূর করা সম্ভব।
১. অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে, ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বকের দাগ দূর করে। ব্রণের দাগ দূর করতে অ্যালোভেরা জেল আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন।
২. লেবু
লেবুতে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। ব্রণের দাগ দূর করতে লেবুর রস আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি দিনে ১-২ বার ব্যবহার করতে পারেন। তবে সেনসিটিভ ত্বকে লেবুর রস ব্যবহার করা উচিত নয়।
৩. মধু
মধুতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। ব্রণের দাগ দূর করতে মধু আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন।
৪. হলুদ
হলুদে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। ব্রণের দাগ দূর করতে হলুদ গুঁড়া আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি দিনে ১-২ বার ব্যবহার করতে পারেন।
৫. চালের গুঁড়া
চালের গুঁড়ায় থাকা গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। ব্রণের দাগ দূর করতে চালের গুঁড়ার সঙ্গে লেবুর রস বা হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করতে পারেন।
৬. টমেটো
টমেটোতে থাকা ভিটামিন সি এবং লাইকোপিন ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। ব্রণের দাগ দূর করতে টমেটোর রস আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি দিনে ১-২ বার ব্যবহার করতে পারেন।
৭. শসা
শসাতে থাকা সিলিকন ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। ব্রণের দাগ দূর করতে শসার রস আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন।
৮. বেকিং সোডা
বেকিং সোডায় থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। ব্রণের দাগ দূর করতে বেকিং সোডা আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। তবে সেনসিটিভ ত্বকে বেকিং সোডা ব্যবহার করা উচিত নয়।
৯. গোলাপজল
গোলাপজল ত্বককে মসৃণ করে এবং ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। ব্রণের দাগ দূর করতে আক্রান্ত স্থানে গোলাপজল দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।
১০. নারকেল তেল
নারকেল তেল ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। ব্রণের দাগ দূর করতে আক্রান্ত স্থানে নারকেল তেল দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।
১১. অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েল ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। ব্রণের দাগ দূর করতে আক্রান্ত স্থানে অলিভ অয়েল দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।
১২. ডার্ক চকোলেট
ডার্ক চকোলেটে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অল্প পরিমাণে ডার্ক চকোলেট খাওয়ার চেষ্টা করুন।
১৩. মটরশুঁটি
মটরশুঁটিতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। মটরশুঁটি বেটে ব্রণের দাগের উপর লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে প্রতিদিন সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করুন।
১৪. স্ক্রাব
ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে স্ক্রাব ব্যবহার করুন। সপ্তাহে ২-৩ দিন ত্বকে স্ক্রাব করুন। এটি ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করবে।
১৫. নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিন
ত্বকের যত্ন নেওয়া ব্রণের দাগ দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ। ত্বক পরিষ্কার রাখুন, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
ব্রণের দাগ দূর করার জন্য ফেসপ্যাক
ব্রণের দাগ দূর করতে ফেসপ্যাক একটি কার্যকর উপায়। ফেসপ্যাক ত্বককে পরিষ্কার করে, মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে এমন কিছু ফেসপ্যাকের রেসিপি নিচে দেওয়া হল:
১. তুলসি ও হলুদ ফেসপ্যাক
উপকরণ:
- ১০-১২টি তুলসি পাতা
- ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়া
- ১ চা চামচ মধু
প্রণালী:
- তুলসি পাতা ভালো করে ধুয়ে নিন।
- একটি পাত্রে তুলসি পাতা, হলুদ গুঁড়া এবং মধু একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- মিশ্রণটি মুখে লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন।
- শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
২. অ্যালোভেরা ফেসপ্যাক
উপকরণ:
- ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল
- ১ চা চামচ মধু
প্রণালী:
- অ্যালোভেরা জেল একটি পাত্রে নিন।
- মধু দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- মিশ্রণটি মুখে লাগান এবং ২০-২৫ মিনিট রেখে দিন।
- শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
৩. মধু ও বেকিং সোডা ফেসপ্যাক
উপকরণ:
- ১ চা চামচ মধু
- ১/২ চা চামচ বেকিং সোডা
- ১ চা চামচ পানি
প্রণালী:
- একটি পাত্রে মধু, বেকিং সোডা এবং পানি একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- মিশ্রণটি মুখে লাগান এবং ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন।
- শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
ব্রণের দাগ দূর করার খাবার
মুখে ব্রণ হলে যেসব খাবার খাওয়া উচিত সেগুলো হলো:
- পানি: পানি শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। ত্বকের জন্যও পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের কোষগুলোকে সঠিকভাবে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা প্রয়োজন।
- ফল এবং সবজি: ফল এবং সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এগুলো ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ফল এবং সবজিতে থাকা ভিটামিন এবং খনিজ ত্বকের কোষগুলোকে পুষ্টি সরবরাহ করে এবং ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
- প্রোটিন: প্রোটিন ত্বকের কোষ গঠনে এবং ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুখে ব্রণ হলে প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুগ্ধজাত খাবার ইত্যাদি খাওয়া উচিত।
- ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড: ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। মুখে ব্রণ হলে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, বাদাম, বীজ ইত্যাদি খাওয়া উচিত।
মুখে ব্রণ হলে যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত সেগুলো হলো:
- চিনি: চিনি শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। প্রদাহ ব্রণের অন্যতম প্রধান কারণ। তাই মুখে ব্রণ হলে চিনিযুক্ত খাবার যেমন মিষ্টি, আইসক্রিম, সফট ড্রিংকস ইত্যাদি এড়িয়ে চলা উচিত।
- তেলযুক্ত খাবার: তেলযুক্ত খাবার ত্বককে তৈলাক্ত করে তুলতে পারে। তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। তাই মুখে ব্রণ হলে তেলযুক্ত খাবার যেমন ভাজাপোড়া, ফাস্টফুড, চকলেট ইত্যাদি এড়িয়ে চলা উচিত।
- প্রক্রিয়াজাত খাবার: প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণে লবণ, চিনি এবং কৃত্রিম উপাদান থাকে। এগুলো ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। তাই মুখে ব্রণ হলে প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
ব্রণ প্রতিরোধে এবং ব্রণের সমস্যা কমাতে খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।
FAQ
দুধ খেলে কি ব্রণ হয়?
দুধে প্রোটিনের পাশাপাশি কিছু হরমোনও থাকে, যেমন প্রোল্যাক্টিন এবং ইনসুলিন। এই হরমোনগুলো ত্বকের তেল উৎপাদন বাড়াতে পারে। তাই, দুধ খেলে ত্বকের তেল উৎপাদন বেড়ে গেলে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে, সকলের ক্ষেত্রেই দুধ খেলে ব্রণ হয় না। কিছু লোকের ক্ষেত্রে দুধ খেলে ব্রণ হয় না, আবার কিছু লোকের ক্ষেত্রে দুধ খেলে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আপনি যদি দুধ খেয়ে ব্রণ হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন, তাহলে দুধ খাওয়া কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। দুধের পরিবর্তে আপনি দুগ্ধজাত খাবার যেমন দই, পনির, বা ছানা খেতে পারেন। এছাড়াও, আপনি ত্বকের যত্নের জন্য নিয়মিত ফেসওয়াশ এবং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ব্রণ হয়?
ভিটামিন বি৩ বা নিয়াসিনামাইডের অভাবে মুখে ব্রণ হতে পারে। নিয়াসিনামাইড একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের সিবাম নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করতেও সহায়তা করে। সিবাম হল ত্বকের প্রাকৃতিক তৈলাক্ত পদার্থ যা লোমকূপকে সুরক্ষা দেয়। তবে অতিরিক্ত সিবাম লোমকূপ বন্ধ করে ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে। ভিটামিন বি৩ সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাংস, মাছ, ডিম, বাদাম, এবং বীজ ইত্যাদি নিয়মিত খেলে মুখে ব্রণ হওয়ার ঝুঁকি কমানো যায়। এছাড়াও, নিয়াসিনামাইড সমৃদ্ধ টপিক্যাল ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও, ভিটামিন এ, সি, এবং ই-এর অভাবেও মুখে ব্রণ হতে পারে। তবে এই ভিটামিনগুলির অভাবে ব্রণ হওয়ার ঝুঁকি ভিটামিন বি৩-এর অভাবের তুলনায় কম। মুখে ব্রণ হলে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আমাদের আজকের আলোচনা এই পর্যন্তই। এছাড়া আমাদের আজকের আলোচনা নিয়ে আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন। আর নিত্য নতুন বিদেশী সাস্থ্য প্রোডাক্ট কিনতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
ধন্যবাদ সবাইকে।