নুন খাওয়া জরুরি। কিন্তু অতিরিক্ত নুন খাওয়া কমানো আরও বেশি দরকারি।
জানেন কি আপনার বাচ্চা রোজকার খাবার থেকে যে নুন পায়, তা দরকারের তুলনায় অনেকটাই বেশি। যে ধরনের নন বিভিন্ন খাবার থেকে মূলত পাওয়া যায় বা রান্নায় ব্যবহৃত হয়, তা সোডিয়াম ক্লোরাইড। মাত্রাতিরিক্ত সোডিয়ামই বিভিন্ন সমস্যার উৎস।
খাবারে নুনে গুরুত্বঃ
- শরীরের আয়োনিক ব্যালান্স ও
জলের ভারসাম্য বজায় রাখে। • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
- হার্ট, লিভার, কিডনি, অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ডের
ওপর নুনের প্রভাব আছে।
- খুব কম বা বেশি নুন নানা সমস্যা
সৃষ্টি করে, যেমন মাথা ঘোরা, মাসল ক্র্যাম্প, ইলেকট্রোলাইট ডিস্টার্বান্স যার ফলে নিউরোলজিকাল সমস্যাও হয়।
খাবার কেনার সময় লেবেলে সোডিয়াম অথবা নুনের মাত্রা চেক করুন। তাজা খাবার খাওয়ান। বাচ্চাদের রান্না আলাদা করে কম নুন দিয়ে করুন। মশলা, হার্ব ব্যবহার করে রান্না উপাদেয় করে তুলুন।
বেশি নুন খাওয়ার অপকারিতা
- হাই ব্লাড প্রেশারের চান্স বাড়ে।
- অ্যাডাল্ট এজে হাইপারটেনশনের সমস্যা হয়। • হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোকের সম্ভাবনা তিন গুণ বেড়ে যায়। • কিডনিতে চাপ পড়ে রেনাল ডিজিজও হতে পারে। • ব্রেন ড্যামেজের আশঙ্কা থাকে।
- বেশি নুন খাওয়ার অভ্যেস মিষ্টি পানীয় খাওয়ার প্রবণতা তৈরি করে। ফলে ওবেসিটির সমস্যা বাড়ে। এইসব সমস্যা কমাতে প্রথম থেকেই বাচ্চার অতিরিক্ত নুন খাওয়ার প্রবণতা সম্বন্ধে সচেতন হোন।
কম নুন খাওয়ার অভ্যেস তৈরি করানঃ
- টিফিনে নুডলস, চিপস, রেডিমেড স্যান্ডউইচ, পিৎজার মতো অতিরিক্ত নুন-সমৃদ্ধ খাবার কম দিন।
- খাবারে আলাদা করে নুন মেশানোর অভ্যেস করাবেন না। বাচ্চার খাওয়ার সময় টেবলে একদম নুনদানি রাখবেন না।
- বাচ্চাদের জন্য অনুমোদিত রেডিমেড ও ক্যানড ফুড, পাউরুটি, সস, বিস্কুট কেনার সময় লেবেলে সোডিয়াম বা নুনের মাত্রা চেক করে নিন। যাতে এই মাত্রা কম সেগুলোই কিনুন।
- ক্যানড ও প্রসেসড ফুডে নুনের মাত্রা বেশি। কাজেই বাচ্চাকে যতটা সম্ভব তাজা খাবার খাওয়ান।
বয়সোপযুক্ত সঠিক সল্ট ইনটেক
বয়স – পরিমাণ/দিন
৬ মাস – ১ গ্রামের কম
৭-১২ মাস – ১ গ্রাম (০.৪ গ্রাম সোডিয়াম)
১-৩ বছর – ২ গ্রাম (০.৮ গ্রাম সোডিয়াম)
৪-৬ বছর – ৩ গ্রাম (১.২ গ্রাম সোডিয়াম)
৭-১০ বছর – ৫ গ্রাম (২ গ্রাম সোডিয়াম)
১১-১৪ বছর – ৬ গ্রাম (২.৪ গ্রাম সোডিয়াম)
লো-সল্ট খাবারের ওপর জোর দিন
বেশি খাওয়াবেনঃ নানা ধরনের ফল, শাকসবজি, গাজর, ব্রকোলি, ভুট্টা, শশা।
কম খাওয়াবেনঃ রেডিমেড ও ইনস্ট্যান্ট ফুড, হ্যাম, সসেজ, চিজ, চিপস, বেকন, সল্টেড বিস্কুট, চানাচুর।
রান্নায় নুনের ব্যবহার কমান
- বাচ্চার রোজকার রান্না আলাদাভাবে কম নন
দিয়ে করুন।
- মশলা, হার্ব দিয়ে রান্না উপাদেয় করে তুলুন।
- রান্নায় লো-সল্ট ইনগ্রেডিয়েন্ট ব্যবহার করুন।
- রুটি, পাস্তা, ওটস, দালিয়া, নুডলস নুন ছাড়া বানান।
মনে রাখুনঃ
- নুন খাওয়া কমাতে গিয়ে বাচ্চার ডায়েটে নুনের প্রয়োজনমাফিক জোগান যেন কমে না যায়।
- সোডিয়াম-পটাশিয়াম ব্যালান্সের ওপরেও জোর দিন। পটাশিয়ামের মূল উৎস বিভিন্ন ফল ও সবজি।
- গরমে শরীর থেকে নুন বেরিয়ে যায়। এ সময় বাচ্চাকে সঠিক পরিমাণে নুন, জল মিশিয়ে খাওয়ান।
- বাচ্চার রোজকার ডায়েটে নুনের পরিমাণ যেন ফ্লাকচুয়েট না করে।
- কিছু বাচ্চা অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ডের সমস্যার কারণে নুন শরীরে ধরে রাখতে পারে না। বেশি নুন খেতে চায়। এমন হলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।