Uncategorized

রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপায়

রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপায়

১০০% কার্যকর! রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপায় যা করবেন

অনেক সময় দেখা যায় সারাদিন অনেক ঘুম ঘুম লাগতে থাকে কিন্তু যেই না রাতে বিছানায় পিট ঠেকালেন তো আর ঘুম নেই।  তারপর সারারাত এপাশ-ওপাশ করে কেটে যায় ঘুমের চেষ্টায়। আজ আপনাদের জানাবো এমন কয়েকটি টিপস যার অভ্যাস এর মাধ্যমে ঘুমের এই সমস্যা দূর হবে। আর তার পাশাপাশি এটাও জানাবো ঘুমের উপকারিতা সম্পর্কে। তো চলুন বেশি কথা না বাড়িয়ে আজকের মূল আলোচনায় চলে যাওয়া যাক।

প্রথমেই জেনে নিই দ্রুত ঘুমানোর টিপসগুলো:

১:তাপমাত্রা:

মনে রাখবেন তাপমাত্রা কিন্তু ঘুমের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। গরম জায়গায় ঘুম কিন্তু এত সহজে আসতে চায় না। আর তাই ঘুমের জন্য প্রয়োজন আরামদায়ক তাপমাত্রা। যা খুব গরম না আবার খুব বেশি ঠান্ডা ও না। ঘুমের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হলো ১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

 

২. ঘুমের আগে হালকা গরম পানিতে গোসল করে নিন:

ঘুমের আগে একটু হালকা গরম পানিতে গোসল করলে অনেক তাড়াতাড়ি ঘুম আসবে। আর ঘুমটাও অনেক গভীর হবে। তাই যাদের ঘুম আসেনা তারা এই টিপসটি ফলো করতে পারেন। পানি গরম করে সেটি ঠান্ডা পানির সঙ্গে মিক্স করে গোসল করে নিতে পারেন। এতে আপনার ঘুম আসার সম্ভাবনা অনেক ঘুম বেড়ে যাবে।

৩. বারবার ঘড়ি দেখা বন্ধ করতে হবে:

ঘুম না আসলে আমাদের অনেকেরই বদভ্যাস বারবার ঘড়ি দেখা। এই অভ্যাসটি বন্ধ করতে হবে। বারবার সময় দেখলে মনের মধ্যে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। তাই অবশ্যই যখন ঘুমাবেন তখন ফোন অথবা ঘড়ি আপনার ঘুমানোর বেডের থেকে নির্দিষ্ট দূরে রাখবেন।

৪. অতিরিক্ত পরিমান কফি খাওয়া উচিত নয়:

মনে রাখবেন চা- কফিতে থাকা ক্যাফেইন আমাদের শরীরকে একটিভ করে রাখে। তাই আপনি যদি বিকেলে চা একটু দেরি করে খান, তা হলে সেই ক্যাফেইনের এফেক্ট আপনার শরীরে বেশিক্ষণ থাকবে। ফলস্বরূপ রাতে ঘুম আসতে দেরী হবে। তাই অবশ্যই চাক কফি নির্দিষ্ট টাইমে মেনটেন করে খাবেন।

৫. দিনের বেলা কিছু সময় ব্যায়াম করুন:

দিনের বেলা আপনি যদি ব্যায়াম করেন তাহলে আপনার শরীরে ক্লান্তি আসবে। এবং পাশাপাশি রাতে ঘুম ও ভালো হবে। তবে ঘুমানোর আগে ব্যায়াম করলে হিতে বিপরীত হতে পারে অর্থাৎ ব্যায়ামের পর শরীর রিলাক্স হতে সময় লাগবে। ফলে ঘুম সহজে আসবে না। তাই অবশ্যই রাতে ঘুমানোর আগে ক্লান্তি হয় এরকম কোন ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করা উচিত নয়।

৬.দুপুরে না ঘুমানোর চেষ্টা করুন:

দুপুরে ঘুমালে রাতে ঘুম দেরিতে আসার সম্ভাবনাই বেশি। একটি রিসার্চে দেখা গেছে যারা দুপুরবেলা ঘুমায় তাদের মধ্যে ৭৬ শতাংশ মানুষই রাতে দেরিতে ঘুমাই। তাই আপনার যদি ঘুম না আসে রাতের বেলায়, তাহলে দুপুরে ঘুমানোর থেকে বিরত থাকুন। এতে করে আপনার রাতে অনেক দ্রুত ঘুম আসার সম্ভাবনা থেকে যাবে।

৭. বাইরে থেকে এসেই শুয়ে পড়বেন না:

বাইরে থেকে এসেই যদি আপনি শুয়ে পরেন বা খাওয়ার পর সাথে সাথে ঘুমানোর চেষ্টা করেন। তাহলে ভুল করছেন, এর চেয়ে বরং শুয়ে শুয়ে কোন বই পড়ুন। এতে শরীর ঘুমের জন্য প্রস্তুত হতে পারবে।

৮. সূর্যের আলোতে ঘুরে আসুন:

 দিনের বেলা কিছুক্ষণ সূর্যের আলোতে ঘুরে আসুন। এর ফলে আপনার শরীর দিন ও রাতের পার্থক্য বুঝবে। এবং ঘুমের চক্র সঠিক থাকবে।

৯. ঘুমের আগে মোবাইল ফোন দূরে রাখুন:

ঘুমের আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা উচিত না। আমাদের শরীরে ঘুমের জন্য মেলানিন নামক একটি হরমোনের প্রয়োজন, আপনি যদি রাতে ঘুমানোর আগে টিভি, ল্যাপটপ বা মোবাইল ব্যবহার করেন। তাহলে এসব ডিভাইস থেকে আসা ব্লু লাইট শরীরের মেলাটোনিনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। তাই অন্তত রাতে ঘুমানোর এক ঘণ্টা আগে 

ব্যবহার করা যেকোনো ইলেকট্রিক ডিভাইস দেখা বন্ধ করে দিন। 

১০.মেডিটেশন করুন: 

ঘুমানোর আগে কিছুক্ষণ মেডিটেশন করলে ঘুম বেশ তাড়াতাড়ি আসেন। এ মেডিটেশনের মাধ্যমে আপনি ঘুমের অভ্যাস করতে পারবেন। প্রথম প্রথম খুব একটা কার্যকর মনে না হলেও আস্তে আস্তে কাজে বেশ কাজে দিবে।

দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই চলুন:

ঘুম আল্লাহর দেয়া সবচেয়ে বড় নেয়ামত। বলা হয়ে থাকে দুনিয়াতে সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি সেই যে বিছানায় যাওয়ার পরে ঘুমিয়ে যেতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার এবং এক্সারসাইজ যেমন আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক তেমনি সঠিক পরিমাণে ঘুম আপনার জন্য তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। আগের প্রজন্মের মানুষের তুলনায় বর্তমান প্রজন্মের মানুষ অনেক সময় ঘুমায়। এই প্রজন্মে আমরা আমাদের জীবনে এতটাই বেশি ব্যস্ত হয়ে গেছি যে, রাতে ঘুমাতে আমাদের অনেক দেরি হয়ে যায়। 

তাই এবার জানাবো দ্রুত ঘুমাতে যাওয়ার ১০ টি উপকারিতা:

১.তাড়াতাড়ি ঘুম আমাদের হৃদপিণ্ড কে সুস্থ রাখে:

এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে সবচেয়ে বেশি হার্ট অ্যাটাক হয় সকাল বেলাতেই। দেরিতে ঘুমানোর কারণে ব্লাড প্রেসার এবং কলেস্টেরল বৃদ্ধি পায় যার কারনে হার্ড এটাক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুণে বেড়ে যায়। ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা ৭০% কমিয়ে দেয়। এইজন্য যদি আপনি আপনার হার্টকে সুস্থ রাখতে চান তাহলে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ুন।

২. দ্রুত ঘুম ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতাকে কমিয়ে দেয়: 

আপনি কি জানেন যারা লেট নাইট শিফ এ কাজ করে তাদের সবচেয়ে বেশি ব্রেস্ট এবং কোলন ক্যান্সার হয়? গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে আলোর উজ্জ্বলতা মেলাটোনিনের মাত্রা হ্রাস করে। মেলাটোনিন হরমোন এমন একটি হরমোন যা ক্যান্সার সেল তৈরিতে বাধা দেয়। যারা তাড়াতাড়ি ঘুমায় তাদের এই হরমোন এর বৃদ্ধি অনেক বেশি হয় যার ফলে ক্যান্সারের সম্ভাবনা ও অনেকাংশে কমে যায়।

৩. দ্রুত ঘুমালে অতিরিক্ত শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে:

তাড়াতাড়ি ঘুমালে শরীরের মেটাবলিজম রেট বেড়ে যায়। মেটাবলিজম রেট হচ্ছে ঘুমানোর পর কি পরিমান ক্যালরি বার্ন হচ্ছে তা। তাড়াতাড়ি ঘুমানোর কারণে আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমান ক্যালরি বার্ন হয়। যার কারণে যাদের ওভার ওয়েট রয়েছে তাদের ওয়েট কমে যায়।

৪. দ্রুত ঘুম দুশ্চিন্তা কমায়:

আমরা যখন তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যায় তখন আমাদের শরীরে এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়। সেই হরমোন আমাদেরকে প্রফুল্ল করে যার ফলে আমাদের দুশ্চিন্তা কমে যায়। এই কারণে যখন আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠি তখন আমাদেরকে অনেক বেশি ফ্রেশ এবং সতেজ অনুভব হয়।

৫. দ্রুত ঘুমালে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়:

এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে মানুষ ঘুমালে তার ব্রেইন নিউরনগুলো সচল হয়ে যায়। এবং স্মৃতিগুলো সমন্বয়ে করে সাজাতে থাকে। ঘুমের সময় যদি ও আমাদের শরীর বিশ্রাম নিতে থাকে কিন্তু আমাদের ব্রেইন সচল থাকে। এবং অনুভূতিগুলো ধরে ধরে সাজাতে থাকে। এটা সাধারণত মধ্যরাতে সংঘটিত হয়ে থাকে, এর ফলে যারা তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যায় তাদের স্মৃতি শক্তি অনেকবৃদ্ধি পায়। এবং ব্রেইন অনেক কাজ করে।

৬. দ্রুত ঘুম আমাদের শরীরে ক্ষতিগ্রস্ত সেলগুলোকে রিপেয়ার করে:

প্রতিনিয়ত কাজ করার কারণে আমাদের শরীরে সেলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যখন আমরা ঘুমায় তখন সেই ক্ষতিগ্রস্ত সেলগুলোর জায়গায় নতুন সেল তৈরি হয়। দ্রুত ঘুমালে আমাদের শরীরে এক ধরনের প্রোটিন তৈরি হয় যা ক্ষতিগ্রস্ত সেলগুলোকে পুনর্গঠন করতে সাহায্য করে। যার কারণে সুঠাম শরীরের অধিকারী হওয়া যায়।

৭. দ্রুত ঘুমালে সেক্সচুয়াল সমস্যার সমাধান হতে পারে:

এক গবেষণায় দেখা গেছে যেসব মানুষ দ্রুত ঘুমায় তাদের শরীরে টেস্টিক্যাল হরমোন অনেকবৃদ্ধি পায়। এই টেস্টিক্যাল হরমোন স্প্যাম তৈরীর ক্ষেত্রে সাহায্য করে। এই কারণে যেসব মানুষ তাড়াতাড়ি ঘুমায় তাদের সেক্সচুয়াল সমস্যা অনেক কম হয়।

৮. দ্রুত ঘুম বয়সের ছাপ কমায়:

 দ্রুত ঘুমালে আমাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন নামক এক ধরনের হরমোন উৎপাদন হয়। এই হরমোনের উৎপাদন কম হলে মানুষের মুখে বয়সের ছাপ পড়ে যায়। যেসব মানুষের এই হরমোন বেশি থাকে তাদের দেখতে অনেক তরুণ মনে হয় এবং তাদের বয়সের ছাপ বোঝা যায়না।

৯. দ্রুত ঘুম মানুষকে ফোকাস করতে সাহায্য করে:

ড্রিঙ্ক করে ড্রাইভ করার যেমন রিস্ক। ঠিক তেমনিভাবে ফোকাসিং করে কোন কাজ করাও এমন রিক্স। দ্রুত ঘুমালে মানুষ সহজে কোন কাজে ফোকাস করতে পারে যার কারণে কাজ ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি কমে যায়। এবং সফলতার পরিমাণ বেড়ে যায়।

১০. দ্রুত ঘুম মানুষের আয়ু বৃদ্ধি করে:

এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে যারা রাত বারোটার পর ঘুমায় তাদের ডায়াবেটিস হৃদরোগ এবং হাই ব্লাড প্রেসার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বেড়ে যায়। এমনকি যারা রেগুলার ডায়েট এবং জিম করে তারাও যদি রাত্রে দেরিতে ঘুমায় তাহলে তাদের ও এসব রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এই কারণে যারা তাড়াতাড়ি ঘুমায় এসব রোগ থেকে তারা দূরে থাকে এবং তাদের আয়ু ও বৃদ্ধি পায়। 

সর্বশেষ কথা:-

দেখুন রাতে দ্রুত ঘুম আমাদের শরীর ভালো রাখার একমাত্র হাতিয়ার। তাই আপনি যদি সুস্থ সফলভাবে বেঁচে থাকতে চান তাহলে দ্রুত ঘুমানোর কোনো বিকল্প নেই। আজকের আর্টিকেলটি আপনার কাছে কেমন লাগলো? জানাতে পারেন কমেন্ট সেকশনে। আর এমনই আনকমন এবং ইন্টারেস্টিং পোস্ট আপনি যদি পড়তে পছন্দ করেন তাহলে আমাদের সঙ্গেই থাকুন ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *