Information

প্রেগন্যান্সির লক্ষণ বোঝার সহজ উপায়

প্রেগন্যান্সির লক্ষণ

প্রেগন্যান্সি বা গর্ভধারণ হলো এমন একটি অবস্থা যখন একজন নারীর জরায়ুতে একটি ভ্রূণ বৃদ্ধি পায়। গর্ভাবস্থা সাধারণত সর্বশেষ রজঃস্রাবের সময় থেকে প্রায় ৪০ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। প্রেগন্যান্সির লক্ষণ সাধারণত গর্ভধারণের প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শুরু হয়। তবে, কিছু লক্ষণ প্রেগন্যান্সির পরেও শুরু হতে পারে। আজকের আর্টিকেলে আমরা প্রেগন্যান্সির লক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। দেরী না করে চলুন আমাদের আজকের আলোচনা শুরু করি।

Pregnancy Symptoms:প্রেগন্যান্সির লক্ষণ গুলো কি কি?

১. মাসিক বন্ধ হওয়া

মাসিক বন্ধ হওয়া হলো প্রেগন্যান্সির সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। গর্ভধারণের পর ডিম্বাশয় থেকে প্রোজেস্টেরন হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোনটি মাসিকের জন্য প্রয়োজনীয় ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে মাসিক বন্ধ হয়ে যায়।

২. স্তনের পরিবর্তন

স্তনদ্বয়ে ওজন, ব্যথা, এবং সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পাওয়া প্রেগন্যান্সির একটি সাধারণ লক্ষণ। গর্ভধারণের পর স্তনদ্বয়ে ল্যাক্টোজ তৈরির জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়াতে স্তনগুলিতে রক্ত ​​সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং স্তনের কোষগুলো বড় হতে শুরু করে। ফলে স্তনগুলি ভারী, ব্যথাযুক্ত, এবং সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।

৩. বমি বমি ভাব এবং বমি করা

বিশেষ করে গর্ভধারণের প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বমি বমি ভাব এবং বমি করা লক্ষণটি দেখা দিতে পারে। গর্ভধারণের পর শরীরে হরমোনগত পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের কারণে বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে। বমি বমি ভাব এবং বমির তীব্রতা গর্ভবতী নারীর ওপর নির্ভর করে। কিছু নারীর ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব এবং বমি খুবই তীব্র হতে পারে, আবার কিছু নারীর ক্ষেত্রে এটি খুবই হালকা হতে পারে।

৪. হরমোনাল পরিবর্তন

গর্ভধারণের পর শরীরে প্রোজেস্টেরন, ইস্ট্রোজেন, এবং হিউম্যান কর্টিকোট্রপিন (এইচসিজি) হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় ফলে হরমোনাল পরিবর্তন দেখা যায়। এই হরমোনগুলোর পরিবর্তনের কারণে নানা ধরনের শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন হতে পারে।

৫. গর্ভাবস্থার দাগ

গর্ভধারণের পর শরীরে হরমোনগত পরিবর্তন ঘটে ফলে গর্ভাবস্থার দাগ দেখা যায়। এই পরিবর্তনের কারণে ত্বকে পোড়ার মতো কালো দাগ দেখা দিতে পারে। এই দাগগুলি সাধারণত বাচ্চা জন্মের পর হালকা হয়ে যায়।

৬. যোনিপথে রক্তপাত

গর্ভধারণের শুরুতে গর্ভসঞ্চারের সময় কিছুটা রক্তপাত হতে পারে। এই রক্তপাতকে ইমপ্লান্টেশন রক্তপাত বলা হয়। ইমপ্লান্টেশন প্রক্রিয়ায় ভ্রুণ জরায়ুর সাথে সংযুক্ত হয়। ফলে যোনিপথে কিছুটা রক্তপাত হতে পারে।

৭.হজম সমস্যা

গর্ভধারণের পর শরীরে হরমোনগত পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের কারণে হজমে সমস্যা হতে পারে। হজম সমস্যার মধ্যে রয়েছে পেট ফাঁপা, গ্যাস, এবং কোষ্ঠকাঠিন্য।

৮. গন্ধের প্রতি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি

গর্ভধারণের পর শরীরে হরমোনগত পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের কারণে গন্ধের প্রতি সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পেতে পারে। কিছু নারীর ক্ষেত্রে কিছু গন্ধ অসহ্য লাগতে পারে, আবার কিছু নারীর ক্ষেত্রে কিছু গন্ধ খুবই ভালো লাগতে পারে।

৯. মানসিক পরিবর্তন

গর্ভধারণের পর নারীরা অনেক ধরনের মানসিক পরিবর্তন অনুভব করতে পারেন। এই পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ, দুঃখ, হতাশা ইত্যাদি।

১০. অন্যান্য সাধারণ লক্ষণ

প্রেগন্যান্সির অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

পেটে বীজের মতো অনুভূতি: গর্ভধারণের প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে জরায়ুতে ভ্রূণ সংযুক্ত হওয়ার সময় পেটে বীজের মতো অনুভূতি হতে পারে।

যোনিপথে তরল নিঃসরণ: গর্ভধারণের সময় যোনিপথে তরল নিঃসরণ হতে পারে। এই তরলটি সাধারণত স্বচ্ছ বা সাদা হয়।

মলত্যাগের পরিবর্তন: গর্ভধারণের সময় মলত্যাগের পরিবর্তন হতে পারে। এই পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, বা মলত্যাগের সময় ব্যথা।

মুখের মধ্যে পরিবর্তন: গর্ভধারণের সময় মুখের মধ্যে পরিবর্তন হতে পারে। এই পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে মাড়ির ব্যথা, মাড়ির রক্তপাত, বা জিহ্বার ঘা।

 

পিরিয়ডের লক্ষণ বনাম গর্ভাবস্থার লক্ষণ

পিরিয়ড এবং গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলির মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হল:

সময়কাল: পিরিয়ডের লক্ষণগুলো সাধারণত মাসিকের কয়েক দিন আগে শুরু হয় এবং মাসিকের শেষের দিকে শেষ হয়। অন্যদিকে, গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলো সাধারণত মাসিকের বিলম্বের কয়েক দিন পরে শুরু হয় এবং গর্ভাবস্থার শেষ পর্যন্ত থাকতে পারে।

লক্ষণের তীব্রতা: পিরিয়ডের লক্ষণগুলো সাধারণত হালকা থেকে মাঝারি তীব্রতার হয়। অন্যদিকে, গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলোর তীব্রতা ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলি খুব তীব্র হতে পারে এবং দৈনন্দিন জীবনে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।

লক্ষণের ধরন: পিরিয়ডের লক্ষণগুলোর মধ্যে সাধারণত ঋতুস্রাব, পিঠে ব্যথা, পেটে ব্যথা, স্তনে ব্যথা বা কোমলতা, মুখের ব্রণ, মাথা ঘোরা এবং ক্লান্তি অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে, গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলোর মধ্যে ঋতুস্রাবের বিলম্ব, মর্নিং সিকনেস, স্তনে ব্যথা বা কোমলতা, বারবার প্রস্রাব, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব, ভার্টিগো, হজমের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ঘন ঘন প্রস্রাব, যোনি থেকে হালকা রক্তপাত বা বাদামী স্রাব, বুক ধড়ফড়, হজমের সমস্যা, ত্বকে পরিবর্তন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।

 

গর্ভাবস্থার লক্ষণ কতদিন পর শুরু হয়

গর্ভাবস্থার লক্ষণ সাধারণত ইমপ্লান্টেশন (implantation) এর পরে শুরু হয়। ইমপ্লান্টেশন হল সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ভ্রূণ জরায়ুর প্রাচীরের সাথে সংযুক্ত হয়। ইমপ্লান্টেশন সাধারণত গর্ভধারণের ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঘটে। এই লক্ষণগুলো সব মহিলার ক্ষেত্রে দেখা যায় না। কিছু মহিলার ক্ষেত্রে এগুলো খুব হালকা হতে পারে, এমনকি লক্ষ্য করাও যায় না। আবার কিছু মহিলার ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলি খুব তীব্র হতে পারে, যার ফলে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হতে পারে। যদি আপনি মনে করেন যে আপনি গর্ভবতী হতে পারেন, তবে আপনার পিরিয়ড মিস হওয়ার পরে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে একটি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা উচিত। প্রেগন্যান্সি টেস্টের মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে আপনি আসলেই গর্ভবতী কিনা।

 

প্রেগনেন্সি কতদিন পর বোঝা যায়

পিরিয়ড মিস হওয়ার পর ৭ থেকে ১০ পর প্রেগনেন্সি কিট টেস্ট করার মাধ্যমে বোঝা যায়। তবে প্রেগনেন্সির লক্ষণ নারী ভেদে ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ পরে দেখা দিতে পারে।

 

প্রেগন্যান্ট হওয়ার কত দিন পর বমি হয়?

প্রেগন্যান্ট হওয়ার কত দিন পর বমি হয়, তার নির্দিষ্ট কোনো উত্তর নেই। সাধারণত গর্ভধারণের ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর বমি শুরু হয়। তবে কিছু মহিলার ক্ষেত্রে গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বমি শুরু হতে পারে। আবার কিছু মহিলার ক্ষেত্রে গর্ভধারণের ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত বমি নাও হতে পারে।

 

আর্লি প্রেগন্যান্সির লক্ষণ

গর্ভাবস্থার প্রথম কয়েক সপ্তাহকে আর্লি প্রেগন্যান্সি বলা হয়। এই সময়কালে শরীরে অনেক পরিবর্তন ঘটে। কিছু মহিলা এই পরিবর্তনগুলো অনুভব করতে পারেন, আবার অনেকে অনুভব করতে পারেন না।

আর্লি প্রেগন্যান্সির কিছু সাধারণ লক্ষণ হল:

পিরিয়ড মিস হওয়া: পিরিয়ড মিস হওয়াই আর্লি প্রেগন্যান্সির সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ।

বমি বমি ভাব: গর্ভধারণের প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বমি বমি ভাব হতে পারে। তবে সকালে বমি বমি ভাব বেশি দেখা যায়।

স্তনে পরিবর্তন: স্তন বড় এবং ভারী হয়ে যেতে পারে। স্তনে ব্যথা এবং কোমলতা অনুভূত হতে পারে।

ক্লান্তি: গর্ভধারণের প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে।

 

সাদা স্রাব কি প্রেগন্যান্সির লক্ষণ

সাদা স্রাব হল যোনি থেকে নির্গত একটি স্বাভাবিক তরল। এটি সাধারণত পাতলা, সাদা বা স্বচ্ছ হয় এবং কোনও গন্ধ থাকে না। সাদা স্রাব যোনিপথকে পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে।প্রেগন্যান্সির প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সাদা স্রাবের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। এটি হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হয়। তবে, সাদা স্রাব ছাড়াও আরও কিছু লক্ষণ থাকলে তা প্রেগন্যান্সির লক্ষণ হতে পারে। যেমন, পিরিয়ড মিস হওয়া, বমি বমি ভাব, স্তনে পরিবর্তন, ক্লান্তি, ঘন ঘন প্রস্রাব ইত্যাদি।যদি আপনি সাদা স্রাব ছাড়াও অন্য কোনো লক্ষণ অনুভব করেন, তাহলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করুন। এটি নিশ্চিত করবে যে আপনি গর্ভবতী কিনা।

 

লক্ষণ ছাড়া গর্ভবতী

গর্ভধারণের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে পিরিয়ড মিস হওয়া, বমি বমি ভাব, স্তনে পরিবর্তন, ক্লান্তি, ঘন ঘন প্রস্রাব ইত্যাদি। তবে, কিছু মহিলা এই লক্ষণগুলির কোনওটাই অনুভব না করেই গর্ভবতী হতে পারেন।

লক্ষণ ছাড়া গর্ভধারণের বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। যেমন:

হরমোনের পরিবর্তন: কিছু মহিলাদের হরমোনের পরিবর্তন এতটা দ্রুত ঘটে যে তারা তা লক্ষ্য করতে পারে না।

গর্ভধারণের সময়কাল: গর্ভধারণের প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণগুলি সবচেয়ে কম দেখা যায়।

স্বাস্থ্য সমস্যা: কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন অ্যানোরেক্সিয়া বা থাইরয়েড সমস্যা, লক্ষণ ছাড়া গর্ভধারণের ঝুঁকি বাড়ায়।

আমাদের আজকের আলোচনা এই পর্যন্তই। যদি প্রেগনেন্সি সম্পর্কিত আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করুন।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *