শরীর সুস্থ রাখতে ব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরি। ব্যায়াম করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়ে, পেশী শক্তিশালী হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ওজন কমে, মানসিক চাপ কমে, এবং সামগ্রিকভাবে শরীরের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। ব্যায়াম করার সঠিক সময় নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সঠিক সময়ে ব্যায়াম করলে ব্যায়ামের উপকারিতাগুলো সর্বোচ্চভাবে পাওয়া যায়। অন্যদিকে, ভুল সময়ে ব্যায়াম করলে ব্যায়ামের উপকারিতা কমে যেতে পারে, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিও হতে পারে।
Best method to exercise: ব্যায়াম করার সঠিক পদ্ধতি
ব্যায়াম করার সঠিক পদ্ধতি জানা থাকলে ব্যায়ামের উপকারিতাগুলো সর্বোচ্চ পাওয়া যায়। অন্যদিকে, ভুল পদ্ধতিতে ব্যায়াম করলে ব্যায়ামের উপকারিতা কমে যেতে পারে, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিও হতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যায়ামের আগে, পরে এবং ব্যায়াম করার সময় কি কি পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে এছাড়া আরোও পদ্ধতি নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
১. ব্যায়ামের আগে
ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই ওয়ার্ম-আপ করা উচিত। ওয়ার্ম-আপ করলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, পেশীগুলো নমনীয় হয়, এবং ব্যায়ামের জন্য শরীর প্রস্তুত হয়। ওয়ার্ম-আপ করার জন্য হালকা হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, বা যোগব্যায়াম করা যেতে পারে।
২. ব্যায়ামের সময়
ব্যায়াম করার সময় অবশ্যই সঠিক ভঙ্গিমা মেনে চলতে হবে। সঠিক ভঙ্গিমা মেনে চললে ব্যায়ামের উপকারিতা ভালোভাবে পাওয়া যায় এবং শারীরিক আঘাতের ঝুঁকি কমে।
৩. ব্যায়ামের পরে
ব্যায়াম শেষ করার পরে অবশ্যই কুল-ডাউন করা উচিত। কুল-ডাউন করলে ব্যায়ামের পর শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে এবং পেশীগুলো শিথিল হয়। কুল-ডাউন করার জন্য হালকা হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, বা যোগব্যায়াম করা যেতে পারে।
৪. ব্যায়ামের ধরন
ব্যায়ামের ধরন অনুযায়ী ব্যায়াম করার পদ্ধতিও ভিন্ন হয়। হালকা ব্যায়ামের ক্ষেত্রে ওয়ার্ম-আপ এবং কুল-ডাউনের সময় কম হতে পারে। ভারী ব্যায়ামের ক্ষেত্রে ওয়ার্ম-আপ এবং কুল-ডাউনের সময় বেশি হতে পারে।
৫. ব্যায়ামের ফ্রিকোয়েন্সি
ব্যায়ামের ফ্রিকোয়েন্সি ব্যায়ামকারীর শারীরিক অবস্থা এবং উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, হালকা ব্যায়াম সপ্তাহে ৩-৪ দিন, ভারী ব্যায়াম সপ্তাহে ২-৩ দিন, এবং যোগব্যায়াম সপ্তাহে ৫-৬ দিন করা উচিত।
Best time to exercise: ব্যায়াম করার সঠিক সময়
১. সকাল
সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্যায়াম করা যেতে পারে। সকালে ব্যায়াম করলে শরীরের ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হয় এবং সারা দিন শরীর ফুরফুরে থাকে। এছাড়াও, সকালে ব্যায়াম করলে শরীরের মেটাবলিজম বাড়ে যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- সময়: সকাল ৬টা থেকে ৯টা
- ব্যায়ামের ধরন: হালকা ব্যায়াম, যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, যোগব্যায়াম, ইত্যাদি
- ব্যায়ামের উদ্দেশ্য: ওজন কমানো, শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি করা, এবং সারা দিনের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করা
২. বিকাল
বিকেলও ব্যায়াম করার জন্য উপযুক্ত সময়। বিকেলে ব্যায়াম করলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয় এবং মনোযোগ বাড়ে। এছাড়াও, বিকেলের ব্যায়াম হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- সময়: দুপুর ২টা থেকে ৪টা
- ব্যায়ামের ধরন: ভারী ব্যায়াম, যেমন ওজন উত্তোলন, ক্রীড়া, ইত্যাদি
- ব্যায়ামের উদ্দেশ্য: শরীরের শক্তি বাড়ানো, পেশী গঠন করা, এবং হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করা
৩. রাত
রাতে ব্যায়াম করলে ঘুম ভালো হয়। এছাড়াও, রাতে ব্যায়াম করলে শরীরের পেশীগুলো শক্ত হয় এবং শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়।
- সময়: সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টা
- ব্যায়ামের ধরন: হালকা ব্যায়াম, যেমন হাঁটা, যোগব্যায়াম, ইত্যাদি
- ব্যায়ামের উদ্দেশ্য: ঘুম ভালো করা, শরীরের পেশীগুলো শক্ত করা, এবং শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি করা
ব্যায়াম করার সঠিক বয়স
ব্যায়াম করা সব বয়সের মানুষের জন্যই উপকারী। তবে, বয়স অনুযায়ী ব্যায়ামের ধরন এবং কঠোরতা ভিন্ন হতে পারে যেমন:
- শিশুদের জন্য: শিশুদের জন্য হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, খেলাধুলা, ইত্যাদি উপযুক্ত। এতে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করে।
- প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। এতে তাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমে।
- বয়স্কদের জন্য: বয়স্কদের জন্য হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটা, যোগব্যায়াম, ইত্যাদি করা উচিত। এতে তাদের শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি পায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
প্রতিদিন কতটুকু ব্যায়াম করা উচিত?
প্রতিদিন কতটুকু ব্যায়াম করা উচিত তা নির্ভর করে ব্যক্তির বয়স, শারীরিক অবস্থা এবং লক্ষ্যের ওপর। তবে সাধারণভাবে বলা যায় প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। এই ব্যায়ামটি হতে পারে হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, যোগব্যায়াম বা যেকোনো ধরনের শারীরিক কার্যকলাপ। যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য প্রতিদিন ৪০-৪৫ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। এছাড়াও, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ইত্যাদি রোগীদের জন্যও নিয়মিত ব্যায়াম করা জরুরি। ব্যায়াম শুরু করার আগে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো। বিশেষ করে যারা শারীরিকভাবে অসুস্থ তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করতে হবে।
ব্যায়াম করার পর কি খাওয়া উচিত?
ব্যায়াম করার পর শরীরের শক্তির ঘাটতি পূরণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত পেশীগুলোকে পুনর্গঠন করার জন্য কিছু পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি। ব্যায়াম করার পর খাওয়া উচিত এমন কিছু খাবার হলো:
- প্রোটিন: প্রোটিন পেশী গঠন এবং মেরামত করতে সাহায্য করে। ব্যায়াম করার পর প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খান।
- কার্বোহাইড্রেট: কার্বোহাইড্রেট শরীরের শক্তির প্রধান উৎস। ব্যায়াম করার পর কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার যেমন ফল, সবজি, শস্য, ভাত বা রুটি খান।
- স্বাস্থ্যকর চর্বি: স্বাস্থ্যকর চর্বি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। ব্যায়াম করার পর স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ খাবার যেমন অ্যাভোকাডো, বাদাম, বীজ বা মাছ খান।
FAQ:
সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করা কি ভালো?
সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করা ভালো কি না, তা নির্ভর করে ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা এবং ব্যায়ামের ধরণের উপর।যারা সুস্থ এবং সকালে ব্যায়াম করতে চান তাদের জন্য সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করা ভালো। এতে শরীরের মেটাবলিজম বাড়ে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। তবে যারা শারীরিকভাবে অসুস্থ, তাদের সকালে খালি পেটে ব্যায়াম না করাই ভালো। এতে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে।এছাড়াও যারা ভারী ব্যায়াম করতে চান তাদের সকালে খালি পেটে ব্যায়াম না করাই ভালো। এতে শরীরে শক্তির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সাধারণভাবে বলা যায় সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করার আগে কিছু হালকা খাবার বা ফল খাওয়া ভালো। এতে শরীরে শক্তির যোগান পাওয়া যায় এবং ব্যায়ামটি আরও উপভোগ্য হয়।
সপ্তাহে কতদিন ব্যায়াম করা উচিত?
সপ্তাহে ৫ দিন ব্যায়াম করা উচিত। প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম করলে শরীরের বিভিন্ন পেশী সচল থাকে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। ব্যায়াম সম্পর্কে আরোও অনেক আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিনিয়ত ভিজিট করুন।
ধন্যবাদ সবাইকে।