ব্রণ হলো ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা। মুখ, পিঠ, ঘাড়, বুক ইত্যাদি স্থানে ব্রণ হতে পারে। ব্রণের কারণে ত্বক লালচে হয়ে যায়, ফুলে যায় এবং ব্যথা হতে পারে। ব্রণ থেকে দাগছোপও হতে পারে। ব্রণের প্রধান কারণ হলো ত্বকের তেল নিঃসরণ বাড়া। ত্বকের তেল গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ হলে লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়। লোমকূপে ব্যাকটেরিয়া জমে গেলে ব্রণ হয়।
মুখে ব্রণ হওয়ার কারণ কি?
১. হরমোনাল পরিবর্তন
বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে ব্রণের সমস্যা দেখা যায়। এছাড়াও, গর্ভধারণ, মাসিক চক্র, গর্ভনিরোধক ওষুধ ইত্যাদি কারণেও হরমোনাল পরিবর্তন হতে পারে এবং ব্রণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২. খাদ্যাভ্যাস
কিছু খাবার ব্রণের সমস্যা বাড়াতে পারে। যেমন: দুগ্ধজাত খাবার, ভাজাপোড়া খাবার, চিনিযুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার।
৩. মানসিক চাপ
মানসিক চাপ ব্রণের সমস্যা বাড়াতে পারে। মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় যা ব্রণের সৃষ্টি করে।
৪. কিছু নির্দিষ্ট রোগ
কিছু নির্দিষ্ট রোগের কারণেও ব্রণ হতে পারে। যেমন: ব্রণ অ্যাকনে, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা ইত্যাদি।
৫. নির্দিষ্ট ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ব্রণ হতে পারে। যেমন: স্টেরয়েড ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ।
মুখে ব্রণ কমানোর ৭ টি উপায়
১. ত্বক পরিষ্কার রাখা
ব্রণ কমাতে ত্বক পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দিনে দুইবার ত্বক পরিষ্কার করা উচিত। এছাড়া ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন। ত্বকের ধরন তৈলাক্ত হলে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপযুক্ত ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন। ত্বকের ধরন শুষ্ক হলে শুষ্ক ত্বকের জন্য উপযুক্ত ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন। ফেসওয়াশ ব্যবহার করার সময় সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়। সাবান ত্বকের তেলকে টেনে নিয়ে যায়, যার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে এবং ব্রণের সমস্যা বাড়তে পারে।
২. ত্বক আর্দ্র রাখা
ত্বক শুষ্ক হলে তেল নিঃসরণ বাড়তে পারে। তাই ত্বক আর্দ্র রাখার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে তেলমুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার সময় ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। ত্বকের ধরন তৈলাক্ত হলে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। ত্বকের ধরন শুষ্ক হলে শুষ্ক ত্বকের জন্য উপযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
৩. ব্রণ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা
ব্রণ স্পর্শ করলে তাতে আরও ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই ব্রণ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। ব্রণ স্পর্শ করার ইচ্ছা হলে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে তারপর ব্রণ স্পর্শ করুন।
৪. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ব্রণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। তাই দুগ্ধজাত খাবার, ভাজাপোড়া খাবার, চিনিযুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। দুগ্ধজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। প্রোটিন ত্বকের তেল নিঃসরণে ভূমিকা পালন করে। তাই দুগ্ধজাত খাবার কম খান। ভাজাপোড়া খাবার, চিনিযুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার ইত্যাদি খাবার খেলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। ত্বক শুষ্ক হলে তেল নিঃসরণ বাড়তে পারে। তাই এই খাবারগুলি এড়িয়ে চলুন।
৫. মানসিক চাপ কমানো
মানসিক চাপ ব্রণ সমস্যা বাড়াতে পারে। তাই মানসিক চাপ কমানো উচিত। মানসিক চাপ কমাতে যোগব্যায়াম, ধ্যান ইত্যাদি করা যেতে পারে।
৬. নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা
সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করে এবং ব্রণের সমস্যা বাড়াতে পারে। তাই বাইরে বের হওয়ার আগে ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। সানস্ক্রিন ত্বকের সমস্ত অংশে ভালোভাবে লাগান। সানস্ক্রিন প্রতি ২ ঘন্টা পর পর রি-অ্যাপ্লাই করুন।
৭. ত্বকের ধরন জানা
ত্বকের ধরন জানা ব্রণ প্রতিরোধ ও কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেসওয়াশ, ময়েশ্চারাইজার, সানস্ক্রিন ইত্যাদি ব্যবহার করুন। এক্ষেত্রে নিকটস্থ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
মুখের ব্রণ দূর করার প্রাকৃতিক উপায়
১. লেবুর রস
লেবুর রস ব্রণের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান। লেবুর রসে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যাসিড ত্বকের ছিদ্রগুলি খুলে দেয় এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধ করে।
ব্যবহারবিধি:
- একটি লেবুর রস বের করে নিন।
- মুখ পরিষ্কার করে একটি তুলোর বলে লেবুর রস লাগান।
- ব্রণ আক্রান্ত স্থানে তুলোর বল দিয়ে হালকাভাবে ঘষুন।
- ১০-১৫ মিনিট পর ভালোভাবে মুখ ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
২. নিম-তুলসির পেস্ট
নিম এবং তুলসির অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।
ব্যবহারবিধি:
- কিছুটা নিমপাতা এবং তুলসিপাতা ভালো করে ধুয়ে নিন।
- পাতাগুলো বেটে পেস্ট তৈরি করুন।
- এই পেস্টটি ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগান।
- ১৫-২০ মিনিট পর মুখ ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- প্রতিদিন সকালে এবং রাতে এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করুন।
৩. মধু এবং দারচিনি
মধু এবং দারচিনিতে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ব্রণের বিরুদ্ধে কার্যকর। মধু ত্বককে ভেতর থেকে ময়েশ্চারাইজ করে এবং ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
ব্যবহারবিধি:
- দুই টেবিল চামচ মধুর সঙ্গে এক চা চামচ দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে নিন।
- এই মিশ্রণটি ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগান।
- ১৫-২০ মিনিট পর মুখ ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- প্রতিদিন রাতে এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করুন।
৪. ডিমের সাদা অংশ
ডিমের সাদা অংশে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।
ব্যবহারবিধি:
- একটি ডিমের সাদা অংশ ভালো করে ফেটিয়ে নিন।
- এই ফেটিয়ে নেওয়া সাদা অংশটি ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগান।
- ১৫-২০ মিনিট পর মুখ ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- প্রতিদিন সকালে এবং রাতে এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করুন।
৫. অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরাতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণের বিরুদ্ধে কার্যকর। অ্যালোভেরা ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে এবং ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
ব্যবহারবিধি:
- একটি অ্যালোভেরা গাছ থেকে পাতা কেটে নিন।
- পাতা থেকে জেল বের করে নিন।
- এই জেলটি ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগান।
- ১৫-২০ মিনিট পর মুখ ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- প্রতিদিন সকালে এবং রাতে এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করুন।
লেবু দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়
লেবুতে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যাসিড ব্রণের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান। লেবুর রসে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের ছিদ্রগুলি খুলে দেয় এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধ করে। লেবুর রসে থাকা অ্যাসিড ত্বকের মৃত কোষগুলিকে ঝেড়ে ফেলে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। লেবু দিয়ে ব্রণ দূর করার জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে:
লেবুর রস এবং মধু মিশিয়ে ব্যবহার
মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। লেবুর রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন এবং এই পেস্টটি ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগান। ১৫-২০ মিনিট পর মুখ ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই পদ্ধতিটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।
লেবুর রস এবং অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে ব্যবহার
অ্যালোভেরা জেলের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। লেবুর রসের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন এবং এই পেস্টটি ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগান। ১৫-২০ মিনিট পর মুখ ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই পদ্ধতিটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।
লেবুর রস এবং ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে ব্যবহার
ডিমের সাদা অংশের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। লেবুর রসের সঙ্গে ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন এবং এই পেস্টটি ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগান। ১৫-২০ মিনিট পর মুখ ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই পদ্ধতিটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।
তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ দূর করার উপায়
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ব্রণ একটি সাধারণ সমস্যা। তৈলাক্ত ত্বকে তেল বেশি উৎপন্ন হয়, যার ফলে ত্বকের ছিদ্রগুলি বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়। এর কারণে ব্রণ হয়।
তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ দূর করার জন্য নিম্নলিখিত উপায়গুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:
- মুখ ভালো করে পরিষ্কার করুন।
- তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন।
- প্রতিদিন দুবার মুখ পরিষ্কার করুন।
- তেলযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- অতিরিক্ত ঘুমানো এবং মানসিক চাপ এড়িয়ে চলুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
মেয়েদের মুখের ব্রণ দূর করার ক্রিম
মেয়েদের মুখের ব্রণ দূর করার জন্য অনেক ধরনের ক্রিম বাজারে পাওয়া যায়। এসব ক্রিম সাধারণত ব্রণের ব্যথা, ফুলে যাওয়া, এবং দাগ দূর করতে সাহায্য করে। তবে, ব্রণ দূর করার জন্য সবচেয়ে ভালো ক্রিম হলো ডাক্তারের পরামর্শে নেওয়া ক্রিম। কারণ, ব্রণের কারণ এবং ধরন অনুযায়ী ক্রিম নির্বাচন করা জরুরি।
মেয়েদের মুখের ব্রণ দূর করার জন্য কিছু জনপ্রিয় ক্রিম হলো:
- বেঞ্জোইল পারঅক্সাইড (Benzoyl peroxide): এটি একটি অ্যান্টিসেপটিক যা ব্রণের ব্যথা, ফুলে যাওয়া, এবং দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
- সালিসাইলিক এসিড (Salicylic acid): এটি একটি দ্রবণীয় উপাদান যা ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে। ফলে ব্রণের মুখ বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্রণ দূর হয়।
- রেটিনয়েডস (Retinoids): এটি একটি ভিটামিন এ জাতীয় উপাদান যা ত্বকের কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ব্রণের মুখ বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্রণ দূর হয়।
আমাদের আজকের আলোচনা এই পর্যন্তই। যদি উপরোক্ত আলোচনা নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করুন।
ধন্যবাদ সবাইকে।