Information

ওজন বাড়ছে না? দ্রুত মোটা হওয়ার উপায় কি?

মোটা হওয়ার ১০ টি উপায়

বমানবদেহের স্বাস্থ্যের জন্য সঠিক ওজন বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ওজন কমানো একটি সমস্যা আবার কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ওজন বাড়ানো একটি সমস্যা। ওজন কমানো বা বাড়ানোর পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন জিনগত কারণ, হরমোনজনিত কারণ, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, খাদ্যাভ্যাসের সমস্যা ইত্যাদি। আমরা আজকে মোটা হওয়ার বিভিন্ন ধরনের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

 

মোটা না হওয়ার কারণ

ওজন হল শরীরের ভর এবং এর মধ্যে থাকা চর্বি, পেশী, হাড়, জল এবং অন্যান্য উপাদানের পরিমাণ। ওজন নির্ধারণের জন্য সাধারণত BMI (Body Mass Index) ব্যবহার করা হয়। BMI এর মান 18.5 থেকে 24.9 এর মধ্যে হলে স্বাস্থ্যকর ওজন ধরা হয়। এর উপরে বা নিচে হলে ওজন বেশি বা কম বলে বিবেচিত হয়।

মোটা না হওয়ার প্রধান কারণ হল শরীরে শক্তির ব্যয় বেশি হওয়া। শরীরের শক্তির ব্যয় বিভিন্ন কারণে হতে পারে যেমন:

  • অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম: শারীরিক পরিশ্রম করলে শরীরের শক্তি ব্যয় হয়। তাই যারা বেশি পরিশ্রম করে, তাদের ওজন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • উচ্চতা: উচ্চতা বেশি হলে শরীরের আকার বড় হয়। তাই উচ্চতা বেশি হলে ওজন কম হলেও স্বাভাবিক দেখায়।
  • বংশগত কারণ: কিছু লোকের মধ্যে বংশগত কারণে ওজন কমে যাওয়ার প্রবণতা থাকে।
  • মানসিক চাপ: মানসিক চাপের কারণে শরীরের মেটাবলিজম কমে যেতে পারে যার ফলে ওজন কমে যেতে পারে।
  • অসুস্থতা: কিছু অসুস্থতার কারণেও ওজন কমে যেতে পারে। যেমন থাইরয়েড সমস্যা, অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা, ক্যান্সার ইত্যাদি।

 

১০ টি সঠিক মোটা হওয়ার উপায়

মোটা হওয়ার জন্য অনেকেই অনেক রকম চেষ্টা করে থাকেন। কেউ কেউ ডায়েট করে, কেউ কেউ ব্যায়াম করে, আবার কেউ কেউ ওষুধ খায়। তবে মোটা হওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হল সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা। নিচে মোটা হওয়ার মোট ১০ টি উপায় দেওয়া হলো।

১. সঠিক খাদ্যাভ্যাস

মোটা হওয়ার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালরিযুক্ত খাবার রাখতে হবে। এছাড়াও প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

মোটা হওয়ার জন্য উপকারী কিছু খাবার হল:

  • দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার
  • মাছ
  • মাংস
  • ডিম
  • বাদাম এবং বীজ
  • তেল
  • শর্করাযুক্ত খাবার

২. নিয়মিত ব্যায়াম

মোটা হওয়ার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করাও জরুরি। ব্যায়াম করলে শরীরের মেটাবলিজম বাড়ে ফলে ক্যালরি বার্ন কম হয়। এছাড়াও ব্যায়াম করলে পেশী গঠিত হয় যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।

মোটা হওয়ার জন্য উপকারী কিছু ব্যায়াম হল:

  • ওজন উত্তোলন
  • বারবেল ব্যায়াম
  • পুশ-আপ
  • সিট-আপ
  • স্কোয়াট

৩. পর্যাপ্ত ঘুম

পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের অভাবে শরীরের হরমোন ভারসাম্য নষ্ট হয় ফলে ওজন কমতে পারে। তাই প্রতিদিন রাতে কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত।

৪. স্ট্রেস কমানো

স্ট্রেস শরীরের হরমোন ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে ফলে ওজন কমতে পারে। তাই স্ট্রেস কমানো গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রেস কমাতে যোগব্যায়াম, ধ্যান, মেডিটেশন ইত্যাদি অনুশীলন করা যেতে পারে।

৫. আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া

আয়োডিন থাইরয়েড হরমোন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয়। থাইরয়েড হরমোন মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করে। তাই মোটা হওয়ার জন্য আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে:

  • সামুদ্রিক খাবার
  • দুগ্ধজাত খাবার
  • ডিম
  • সবুজ শাকসবজি

৬. সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া

সেলেনিয়াম একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা থাইরয়েড হরমোন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয়। তাই মোটা হওয়ার জন্য সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে:

  • সামুদ্রিক খাবার
  • বাদামে এবং বীজ
  • মাংস
  • ডিম

৭. জিংক সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া

জিংক থাইরয়েড হরমোন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয়। তাই মোটা হওয়ার জন্য জিংক সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। জিংক সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে:

  • মাংস
  • সামুদ্রিক খাবার
  • বাদাম এবং বীজ
  • দুগ্ধজাত খাবার

৮. ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া

ভিটামিন ডি থাইরয়েড হরমোন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয়। তাই মোটা হওয়ার জন্য ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে:

  • সূর্যের আলো
  • মাছ
  • ডিম
  • দুগ্ধজাত খাবার

৯. প্রোটিন শেক পান করা

প্রোটিন শেক পান করলে সহজেই প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি গ্রহণ করা যায়। তাই প্রতিদিন সকালে ও রাতে একটি করে প্রোটিন শেক পান করা যেতে পারে।

১০. ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া

মোটা হওয়ার জন্য যদি কোনও শারীরিক সমস্যা থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডাক্তার আপনার অবস্থার উপর ভিত্তি করে আপনাকে পরামর্শ দিতে পারবেন।

 

মোটা হওয়ার খাদ্য তালিকা

মোটা হওয়ার জন্য প্রথমেই খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে। বেশি পরিমাণে ফলমূল, শাকসবজি, ওটস, ডাল, ছোলা, মটরশুঁটি ইত্যাদি খাওয়া উচিত। চর্বিযুক্ত খাবার, তেলে ভাজা খাবার, ফাস্ট ফুড, মিষ্টিজাতীয় খাবার যথাসম্ভব কম খেতে হবে।

 

সুষম খাবার গ্রহণের উপায়:

  • প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ টি ফলমূল এবং সবুজ শাকসবজি খান।
  • ব্রেকফাস্টে ওটস, ডিম, ফল বা সবুজ শাকসবজি খান।
  • দুপুর ও রাতের খাবারে ভাত, ডাল, সবজি, মাছ বা মাংস খান।
  • ফাস্ট ফুড, মিষ্টিজাতীয় খাবার এবং তেলে ভাজা খাবার যথাসম্ভব কম খান।

 

মোটা হওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট খাবার রয়েছে যা বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত। এই খাবারগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি এবং পুষ্টি উপাদান থাকে।

 

মোটা হওয়ার জন্য উপকারী খাবার:

  • বাদাম এবং বীজ: বাদাম এবং বীজে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার এবং ক্যালোরি থাকে। বাদাম এবং বীজ নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • ডাল: ডালে প্রোটিন, ফাইবার এবং ক্যালোরি থাকে। ডালগুলিকে নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • মাছ: মাছে প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ক্যালোরি থাকে। সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন মাছ খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • ডিম: ডিমে প্রোটিন, ক্যালোরি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে। প্রতিদিন ১-২টি ডিম খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার: দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবারে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে। দুধ, দই, ছানা ইত্যাদি নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • ফলমূল এবং শাকসবজি: ফলমূল এবং শাকসবজিতে ভিটামিন, খনিজ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে। তবে ফলমূল এবং শাকসবজিতে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে। তাই ফলমূল এবং শাকসবজির পাশাপাশি অন্যান্য খাবারও নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করুন।

 

মোটা হওয়ার জন্য খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে:

  • প্রতিদিন ৩টি প্রধান খাবার এবং ২-৩ টি টিফিন খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • খাবার খাওয়ার সময় ভালোভাবে চিবিয়ে খান।
  • খাবার খাওয়ার সময় টেলিভিশন বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
  • খাবার খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করুন।

 

মোটা হওয়ার ক্ষতিকর দিক

মোটা হওয়া বা স্থূলতা একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে। মোটা হওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলি নিম্নরূপ:

 

হৃদরোগ

মোটা হওয়া হৃদরোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, এবং অন্যান্য হার্টের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। মোটা ব্যক্তিদের শরীরে বেশি পরিমাণে ফ্যাট জমা হয় যা রক্তনালীগুলিকে সংকুচিত করে। এটি রক্তের প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

 

ডায়াবেটিস

মোটা হওয়া ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। মোটা ব্যক্তিদের ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা কমে যায়। ইনসুলিন হল একটি হরমোন যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা কমে গেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় যা ডায়াবেটিসের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

 

ক্যান্সার

মোটা হওয়া কিছু ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় যেমন কোলোরেক্টাল ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার। কোলোরেক্টাল ক্যান্সার হল একটি মারাত্মক ক্যান্সার যা কোলন এবং রেক্টামের টিস্যুতে শুরু হয়। স্তন ক্যান্সার হল মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সার। ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার হল মহিলাদের মধ্যে একটি বিরল ক্যান্সার।

 

অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা

মোটা হওয়া অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকিও বাড়ায় যেমন অস্টিওআর্থারাইটিস, স্লিপ অ্যাপনিয়ার এবং কিছু ধরনের মানসিক সমস্যা। অস্টিওআর্থারাইটিস হল একটি জয়েন্টের ব্যথা এবং অস্থিরতা দ্বারা চিহ্নিত একটি অবস্থা। স্লিপ অ্যাপনিয়ার হল একটি ঘুমের ব্যাঘাত যা ঘুমের সময় শ্বাসের ব্যাঘাতের দ্বারা চিহ্নিত। কিছু ধরনের মানসিক সমস্যা যেমন বিষণ্নতা এবং উদ্বেগ, মোটা হওয়ার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।

 

মোটা হওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলি এড়াতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে প্রচুর পরিমাণে ফলমূল, শাকসবজি, এবং সম্পূর্ণ শস্য অন্তর্ভুক্ত থাকে। নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে এবং অতিরিক্ত ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে।

 

আমাদের আজকের আলোচনা এই পর্যন্তই। এছাড়া উপরোক্ত বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন এবং নিত্য নতুন প্রোডাক্ট কিনতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

 

ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *