ঠোঁট মানুষের মৌখিক সৌন্দর্যের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। ঠোঁটের গোলাপি রঙ ও আকৃতি মুখের সৌন্দর্যকে অনেকাংশে বৃদ্ধি করে। কিন্তু অনেকের ঠোঁট স্বাভাবিকভাবে গোলাপি হয় না। ঠোঁটের কালচেভাব, শুষ্কতা, ফাটাভাব ইত্যাদি কারণে ঠোঁট তার স্বাভাবিক রং হারিয়ে ফেলে। তাই ঠোঁটকে গোলাপি ও সুন্দর রাখতে যত্ন নেওয়া জরুরি। ঠোঁট গোলাপি করার জন্য বিভিন্ন ধরনের উপায় রয়েছে। এসব উপায় ব্যবহার করলে ঠোঁটের কালচেভাব দূর হয়ে ঠোঁট গোলাপি ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। আজকে আমরা এসব উপায় নিয়ে আলোচনা করবো। দেরি না করে চলুন আমাদের আজকের আলোচনা শুরু করি।
ঠোঁট কালো হওয়ার কারণ কি
ঠোঁট সহ আমাদের দেহের সকল স্থানের রং মেলানিন নামক একধরনের রঞ্জক পদার্থ নিয়ন্ত্রণ করে। এই মেলানিনের উৎপাদনের উপর ঠোঁটের রং নির্ভর করে। মেলানিনের উৎপাদন বেশি হলে ঠোঁট কালো হয়ে যেতে পারে। সূর্যের আলো, ধুমপান, গর্ভধারণ, বয়স বৃদ্ধি ইত্যাদি মেলানিনের উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে। মুলত এ কারণেই ঠোট কালো হয়ে যায়।
কালো ঠোঁট গোলাপি করার প্রাকৃতিক উপায়
কিছু প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করে আপনি আপনার কালো ঠোঁট গোলাপি করতে পারবেন। নিচে উপায়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. হলুদ
কালো ঠোঁট গোলাপি করার ক্ষেত্রে হলুদ অনেক কার্যকরী। হলুদে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ঠোঁটের রং উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
প্রণালী:
- এক চা চামচ হলুদ গুঁড়া ও এক চা চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে নিন।
- মিশ্রণটি ঠোঁটে লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
২. গোলাপ জল
গোলাপ জল ঠোঁটের রং উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। বাজারে এটি অহরহ পাওয়া যায়।
প্রণালী:
- এক চা চামচ গোলাপ জল ও এক চা চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে নিন।
- মিশ্রণটি ঠোঁটে লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
৩. বিটরুট
বিটরুটে বিটা ক্যারোটিন রয়েছে যা ঠোঁটের রং উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। বাজার থেকে বিটরুট কিনতে পারবেন।
প্রণালী:
- একটি বিটরুট ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে নিন।
- বিটরুট বেটে নিন।
- বিটরুটের রস ঠোঁটে লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
৪. লেবুর রস
লেবুর রসে থাকে ভিটামিন সি যা প্রাকৃতিক ব্লিচিং হিসেবে কাজ করে। এটি ঠোঁটের কালচেভাব দূর করে গোলাপি রং আনতে সাহায্য করে।
প্রণালী:
- একটি লেবুর রস বের করে নিন।
- একটি তুলোর বল লেবুর রসে ডুবিয়ে ঠোঁটে লাগান।
- ৫-১০ মিনিট পর ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
৫. চিনি স্ক্রাব
চিনি প্রাকৃতিক এক্সফলিয়েটর হিসেবে কাজ করে। চিনি ঠোঁটের মৃত কোষ দূর করে ঠোঁটকে নরম ও কোমল করে।
প্রণালী:
- এক চা চামচ চিনি ও এক চা চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে নিন।
- মিশ্রণটি ঠোঁটে লাগান এবং আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন।
- ৫-১০ মিনিট পর ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
৬. বরফ
বরফ ঠোঁটের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ঠোঁটকে উজ্জ্বল করে তোলে। এতে ঠোঁটের কালচেভাব দূর হয়ে গোলাপি রঙ আসবে।
প্রণালী:
- এক টুকরো বরফ ঠোঁটে ঘষুন।
৭. অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরা জেল ঠোঁটের কালচেভাব দূর করে ঠোঁটকে গোলাপি করে তোলে। অনেকে ঠোঁট গোলাপি করার জন্য অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করে।
প্রণালী:
- অ্যালোভেরা জেল ঠোটে লাগান।
- ১৫-২০ রেখে ধুয়ে ফেলুন।
এছাড়া নিম্নোক্ত টিপস গুলো অনুসরণ করতে পারেন।
কিছু টিপস:
- ঠোঁটকে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজ করুন।
- ঠোঁটকে রোদ থেকে রক্ষা করুন।
- ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।
- বেশি টক খাবার খাবেন না।
- ঠোঁটে ঘন ঘন লিপস্টিক বা লিপ বাম ব্যবহার করবেন না।
ঠোঁট গোলাপি করার জেল
ঠোঁট গোলাপি করার জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের জেল পাওয়া যায়। এই জেলগুলোতে সাধারণত প্রাকৃতিক উপাদান থাকে যা ঠোঁটের কালচেভাব দূর করে গোলাপি রং আনতে সাহায্য করে।
কিছু জনপ্রিয় ঠোঁট গোলাপি করার জেল
- রিভলভু লাইট আপ লিপ জেল
- ল্যাকমে লাইট আপ লিপ জেল
- ফার্স্ট ফ্রেশ লিপ জেল
- ওরিওন লিপ জেল
- লাভলি লিপ জেল
ঠোঁট গোলাপি করার জেলের উপকারিতা
- ঠোঁটের কালচেভাব দূর করে।
- ঠোঁটকে গোলাপি রং দেয়।
- ঠোঁটকে নরম ও কোমল করে।
- ঠোঁটকে ময়েশ্চারাইজ করে।
ঠোঁট গোলাপি করার জেল কেনার সময়
- জেলটিতে প্রাকৃতিক উপাদান আছে কিনা তা দেখে কিনুন।
- জেলের উপাদান দেখে আপনার ত্বকে কোনো অ্যালার্জি আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
- জেলটির মেয়াদ দেখে কিনুন।
ঠোঁট গোলাপি করার জেল ব্যবহারের নিয়ম
- সপ্তাহে ২-৩ বার জেলটি ব্যবহার করুন।
- জেলটি ব্যবহারের আগে ঠোঁটের ত্বকে কোনো ক্ষত বা ইনফেকশন থাকলে ব্যবহার করবেন না।
- জেলটি ব্যবহারের পরে ঠোঁটে লিপস্টিক বা লিপ বাম ব্যবহার করতে পারেন।
আমাদের শেষ কথা
কালো ঠোঁট আমাদের মুখের সৌন্দর্যকে অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। তাই আমাদের উচিৎ ঠোঁটকে কালো হতে না দেওয়া। উপরে আমরা কালো ঠোঁটকে কিভাবে গোলাপি করবেন এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনার যদি উপরোক্ত আলোচনা বিষয়ক কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করবেন। এছাড়া উপকৃত হলে পোস্টটি শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।