চুল পাকা বয়স বৃদ্ধির একটি প্রতিক। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রতিটি মানুষেরই চুল পাকে। সাধারণত ২৫-৩০ বছর বয়সে মানুষের চুল পাকা শুরু হয়। তবে বিভিন্ন কারণে কম বয়সেও চুল পাকতে পারে। কম বয়সে চুল পাকার জন্য আমরা অনেকেই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির শিকার হয়। চুল পাকা শুরু হয়ে গেলে কিছু করার থাকে না। তবে কিছু উপায় অবলম্বন করে আপনি চুল পাকা রোধ করতে পারেন। আজকের আর্টিকেলে আমরা চুল পাকা থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আলোচনা করবো। তার আগে চলুন দেখে নেই কেনো চুল পাকে।
অল্প বয়সে চুল পাকে কেন?
চুলের গোড়ায় এক ধরনের থলের মতো অঙ্গ থাকে যেখান থেকে পিগমেন্ট সেল বা কোষ উৎপন্ন হয়। এই পিগমেন্ট কোষে মেলানিন থাকে যা চুলের রং নির্ধারণ করে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে পিগমেন্ট কোষের উৎপাদন কমে যেতে শুরু করে। এছাড়া অল্প বয়সে বিভিন্ন কারণে এই কোষের উৎপাদন কমে যায়। যার ফলে পাকা চুল দেখা দেয়। নিম্নোক্ত কারণে অল্প বয়সে চুল পেকে যেতে পারে অর্থাৎ পিগমেন্ট কোষের উৎপাদন কমে যেতে পারে।
১. ভিটামিনের অভাব
অল্প বয়সে চুল পেকে যাওয়ার সবথেকে বড় কারণ ভিটামিনের অভাব। বিশেষ করে ভিটামিন বি-১২ এবং ডি-৩ এর অভাবে চুল পাকা শুরু হয়। এছাড়া বায়োটিন, ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন ই ইত্যাদির অভাব চুল পাকায় প্রভাব ফেলতে পারে।
২. জিনগত প্রভাব
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে জিনগত বৈচিত্র্যের কারণে অল্প বয়সে চুল পাকতে পারে। সাধারণত শ্বেতাঙ্গিদের ২০ বছর বয়সেই চুল পাকা শুরু হয় অপরদিকে এশিয়ানদের সাধারণত ২৫ বছর বয়সে চুল পাকতে শুরু করে।
৩. ধুমপান
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যারা ধুমপান করে তাদের চুল কম বয়সে পাকতে শুরু করে। ধুমপান সরাসরি কম বয়সে চুল পাকার সাথে জড়িত।
৪. অধিক চিন্তা
অধিক চিন্তার ফলে দেহে বিভিন্ন ধরনের মুক্ত মুলক তৈরী হয় যা পিগমেন্ট কোষ উৎপাদনে বাধা প্রদান করে। এছাড়া অধিক চিন্তার ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় যার ফলে কম বয়সে চুল পাকা শুরু হয়।
৫. রাসায়নিক পন্য
আমরা চুলে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পন্য ব্যবহার করি। এসব পন্য অত্যধিক পরিমাণে ব্যবহার করলে চুল পেকে যেতে পারে। এমনকি কিছু শ্যাম্পু আছে যেগুলো চুলের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড সমৃদ্ধ রাসায়নিক পন্য চুলের জন্য ক্ষতিকর।
অল্প বয়সে চুল পাকা থেকে মুক্তির ১০ টি উপায়
জিনগত কারণে চুল পাকা শুরু হলে আপনি চাইলেও তা রোধ করতে পারবেন না। তবে ভিটামিনের অভাব, ধুমপান, অধিক চিন্তা ইত্যাদির ফলে চুল পাকলে আপনি কিছু উপায় অবলম্বন করে আবার কালো চুল ফিরিয়ে আনতে পারবেন। এরকম দশটি উপায় নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
১. এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খান
ফ্রেশ শাক সবজি, ফলমূল, সবুজ চা ইত্যাদিতে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। প্রতিদিন এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খান। এন্টিঅক্সিডেন্ট চুল পাকা রোধে অনেক সাহায্য করে। এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া অধিক চিন্তা কমাতেও এটি সাহায্য করে। ফলে পিগমেন্ট কোষের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
২. ভিটামিনের অভাব পূরণ করুন
যদি দেহে ভিটামিনের অভাব দেখা দেয় এবং এর ফলে চুল পাকতে শুরু করে তাহলে বিভিন্ন ধরনের খাবার অথবা ওষুধের মাধ্যমে ভিটামিনের অভাব পূরণ করুন। বিশেষ করে ভিটামিন বি, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার বেশি খান। সামুদ্রিক মাছ, মাংস, শাক সবজি ইত্যাদি খেতে পারেন।
৩. ধুমপান ত্যাগ করুন
ধুমপান সরাসরি চুল পেকে যাওয়ার সাথে জড়িত। এছাড়া এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং অধিক চিন্তা বৃদ্ধি করে। ফলে অল্প বয়সে চুল পাকতে শুরু করে। তাই দ্রুত ধুমপান ত্যাগ করুন।
৪. আমলকী ব্যবহার করুন
চুলের জন্য আমলকী অনেক কার্যকরি একটি আয়ুর্বেদিক ঔষধ। বাজারে আপনি আমলকী ফল পেয়ে যাবেন। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে এটি পাওডার আকারে পাওয়া যায়। আমলকীর পাওডার এবং নারিকেল তেল একসাথে মিশিয়ে চুলে দিতে পারেন। এতে অনেক ভালো ফল পাবেন।
৫. ভৃঙ্গরাজ ব্যবহার করুন
আমলকীর মতো ভৃঙ্গরাজ চুল পাকা, চুল পড়া, খুসকি ইত্যাদি দুর করতে সাহায্য করে। বাজারে আপনি ভৃঙ্গরাজের তেল পেয়ে যাবেন। এছাড়া ঘরোয়া উপায়ে এর পাতার রস এবং নারিকেল তেল মিশিয়ে গরম করুন এবং তা চুলে ব্যবহার করুন।
৬. চুলে ব্লাড সার্কুলেশন বৃদ্ধি করুন
ব্লাড সার্কুলেশন বলতে বোঝায় রক্ত সঞ্চালন। চুলে ব্লাড সার্কুলেশন বৃদ্ধি করার জন্য মাথায় ম্যাসাজ করুন। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করলেও ব্লাড সার্কুলেশন বৃদ্ধি পায়। ব্লাড সার্কুলেশন বৃদ্ধি করলে চুলের গোড়া অনেক শক্ত হয়।
৭. লেবুর রস এবং নারিকেল তেলের মিশ্রণ ব্যবহার করুন
লেবুর রসে ভিটামিন সি থাকে যা এক ধরনের এন্টিঅক্সিডেন্ট। দুই চা চামচ লেবুর রস এবং নারিকেল তেল মিশিয়ে একটুখানি গরম করুন। মাথায় লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৮. মেথি ব্যবহার করুন
চুলের বিভিন্ন সমস্যায় মেথি ব্যবহার করার প্রচলন রয়েছে। মেথিতে আছে ভিটামিন বি যা চুল পড়া রোধ করে। ২ চা চামচ মেথি এক কাপের এক চতুর্থাংশ পানিতে মিশিয়ে রাত্রে রেখে দিন। সকালে উঠে মেথি পানি থেকে তুলে পেস্ট তৈরী করুন। উক্ত পেস্ট মাথায় লাগিয়ে ৪৫ মিনিট পরে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৯. মেহেদী এবং কফির মিশ্রণ
মেহেদী সাদা চুল লুকিয়ে রাখতে সাহায্য করে এবং কফি চুলে কালোভাব আনতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি প্রাকৃতিক উপায়ে চুলের গোড়া শক্ত করে চুলে পুষ্টি যোগায়। ৫ চা চামচ পরিমাণ মেহেদীর পাওডার এবং ১ চামচ কফি মিশিয়ে পানি দিয়ে পেস্ট তৈরী করুন। উক্ত পেস্ট মাথায় লাগিয়ে ২-৩ ঘন্টা পরে ধুয়ে ফেলুন।
১০. অশ্বগন্ধা
গবেষণায় দেখা গেছে অশ্বগন্ধা মেলানিনের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। মেলানিনের উৎপাদনের উপর আমাদের চুলের রং নির্ভর করে। তাই এর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অশ্বগন্ধা ব্যবহার করতে পারেন। ২ চামচ অশ্বগন্ধা এবং ২ চামচ আমলকীর তেল মিশিয়ে পেস্ট তৈরী করুন। উক্ত পেস্ট মাথায় ব্যবহার করুন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
FAQ:
কত বছর বয়সে চুল পাকে?
জিনগত পার্থক্যের কারণে বিভিন্ন বয়সে চুল পাক শুরু হয়। শেতাঙ্গি অর্থাৎ ইউরোপীয়ানদের সাধারণত ২০ বছর বয়সের পর থেকে চুল পাকা শুরু হয়। অপরদিকে এশীয়ানদের সাধারণত ২৫-৩০ বছর বয়সে চুল পাকতে শুরু করে।
কোন ভিটামিনের অভাবে চুল সাদা হয়?
সাধারণত দেহে ভিটামিনের অভাব দেখা দিলে চুল সাদা হয়। তবে বিশেষ করে ভিটামিন বি-৬, বি-১২, ভিটামিন ডি, বায়োটিন, ভিটামিন ইত্যাদির কারণে চুল সাদা হয়।
চুল পাকা বন্ধ করার উপায় কি?
জিনগত কারণে চুল পাকা শুরু হলে তা বন্ধ করা যায় না। তবে স্বভাবগত কারণে অথবা প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে চুল পাকা শুরু হলে আপনি তা বন্ধ করতে পারবেন। আমলকীর তেল, নারীকেল তেল, অশ্বগন্ধা, মেহেদী, মেথি ইত্যাদি আয়ুর্বেদীক উপাদান চুল পাকা বন্ধ করতে সাহায্য করে।
চুল পাকা মানবজীবনের একটি সাধারণ বিষয় হলেও অল্প বয়সে চুল পাকলে আমরা অনেক অস্বস্তিকর মুহুর্তের সম্মুখীন হয়। এই মূহুর্ত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আপনি উপরোক্ত উপায় গুলো অবলম্বন করতে পারেন। আশাকরি ইতিবাচক ফল পাবেন।
এছাড়া বিভিন্ন ধরনের হেয়ার প্রোডাক্ট কিনতে আমাদের পরদেশী ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
ধন্যবাদ সবাইকে।